আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্র্রেলিয়া ও কানাডার পাশাপাশি এশিয়ার দেশ চীনও এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিয়ে আকর্ষণ করতে শুরু করেছে।চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চীন সরকারের দেয়া স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপ এর যাবতিয় বিষয় দেখভাল করে চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি)। সিজিএস/সিএসসি (CGS/CSC) নামে অধিক পরিচিত এই স্কলারশিপের বিস্তারিত নিয়েই আজকের আয়োজন।
ব্যাচেলরে সিজিএস/সিএসসি স্কলারশিপ মানেই চাইনিজ মাধ্যম, ইংরেজিতে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
আর মাস্টার্সে ইংলিশ এবং চাইনিজ দুই মাধ্যমেই পড়ার সুযোগ আছে। তবে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি মাধ্যমকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
আপনি এই স্কলারশিপের আওতায় করতে পারবেন ব্যাচেলর, মাস্টার্স, কিংবা পিএইচডি।
স্কলারশিপ এর নাম
চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ ( সি জি এস )
যে যে বিষয়ে অধ্যয়ন করা যাবে
চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) আওতায় আপনি পড়তে পারবেন ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স। এখান থেকে প্রথমে আপনার পছন্দের বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে নিন। সিএসসি বি-টাইপের জন্য – http://www.campuschina.org/universities/categories.html
দেশ এবং কর্তৃপক্ষ
চাইনিজ সরকার। চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি)
বৃত্তির সুযোগ সুবিধাসমূহ
স্কলারশিপের আওতায় আপনি যা যা পাবেনঃ
১। টিউশন ফি
২। মাসিক ভাতা
৩। বিমান ভাড়া
৪। স্বাস্থ্য বীমা
৫। ফ্রি আবাসন
আবেদনের যোগ্যতা
১) বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। অবশ্যই সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
২) অন্য কোনো স্কলারশিপ বা ফান্ডিং এর জন্য মনোনীত হওয়া যাবে না।
৩) স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ এবং বয়স অবশ্যই ২৫ এর চেয়ে কম হতে হবে।
৪) মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং বয়স অবশ্যই ৩৫ এর চেয়ে কম হতে হবে।
৫) ডক্টরেল প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য উচ্চ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং বয়স অবশ্যই ৪০ এর চেয়ে কম হতে হবে।
আবেদনের সময়সীমা
আবেদন শুরু হয় সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আর শেষ হয় জুন-জুলাইয়ের দিকে। তবে বিস্তারিত জানতে ও পিন পয়েন্ট তথ্যের জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে অফিসিয়াল ওয়েব সাইটের।
https://studyinchina.csc.edu.cn/
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে নিচের ওয়েবসাইট থেকে করতে হবে।
http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship
আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রতি বছরই প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
যেসকল দেশের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য
চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) এ বিশ্বের যে কোন দেশের সুস্থ নাগরিক আবেদন করতে পারবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
এই স্কলারশিপে আবেদন করার উপায় হচ্ছে,
(১) বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (টাইপ – এঃ সবোর্চ্চ ২টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ)
(২) চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (টাইপ – বিঃ সবোর্চ্চ ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ)
Type A তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় এবং Type B তে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়।
প্রথম পদ্ধতিঃ বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট – http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship
সকল ডকুমেন্টস ও আবেদন পত্র জমা দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এরপর প্রাথমিক বাছাই-এর সকল কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে চাইনিজ এম্বেসীতে এবং সেখানে আপনাকে ভাইভা দিতে হবে। পরবর্তীতে রেজাল্ট জানিয়ে দেওয়া হবে। আর আপনি এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ টি সাবজেক্টে আবেদন করতে পারবনে। আর এডমিশন কার্য শেষ হলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এখানে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার এইস,এস,সি এর ফলাফল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এছাড়া ভাল কোনো শিক্ষকের প্রসংসা পত্র, কো-কারিকুলার এক্টিভিটিজ এবং চাইনিজ জানা থাকলে আপনি সেটাতে বেনিফিট পেতে পারেন। এখানে ভাইবা ও একটা মূখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল হতে একটু দেরী হয় ,সাধারনত জুলাই এর শেষ সপ্তাহ বা আগস্ট এর প্রথম সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে
প্রথমেই আপনাকে চাইনীজ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে হবে এবং দেখে নিতে হবে এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) প্রদান করে কি না। তো আপনারা যারা এই মাধ্যমে আবেদন করতে চান তারা নভেম্বর- ডিসেম্বর থেকেই বিভিন্ন ভার্সিটির ওয়েব সাইটে তথ্য খোজা শুরু করুন। বিভিন্ন ভার্সিটির ওয়েব সাইট,সেখানে আবেদনের প্রক্রিয়া,তাদের রিকোয়ারমেন্ট দেখলে আপনি নিজেই সব কিছু বুঝে যাবেন। চীনের অধিকাংশ ভালমানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপ (সিজিএস) বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। এরপর সকল কাগজপত্র ও আবেদন ফর্মসহ আবেদন করতে হবে স্কলারশিপের জন্য। এবার সকল কাগজপত্র কুরিয়ার করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় আর যদি এপ্লিকেশন ফি দেবার প্রয়োজন হয় তবে সেটাও দিতে হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজাল্ট দিলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় খোজার ক্ষেত্রে https://www.topuniversities.com/universities/region/asia/country/china অথবা http://www.campuschina.org/ এই ওয়েব সাইটের সহায়তা নিতে পারেন।
স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য আপনাকে জমা দিতে হবেঃ
১. অ্যাপ্লিকেশন ফরম।
২. পাসপোর্ট।
৩. পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৪. সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টের নোটারাইজ কপি।
৫. স্টাডি প্ল্যান।
৬. রিকোমেন্ডেশন লেটার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন প্রফেসরের কাছ থেকে রিকোমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র নিতে হবে।
৭. মেডিকেল রিপোর্ট।
৮. IELTS বা TOFFEL সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
আবেদন করতে ভিজিট করুণঃ
সিএসসি স্কলারশিপ এর আবেদনের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এজেন্সি নাম্বার কোড জানার জন্য ভিজিট করুনঃ
https://scholarshipfellow.com/agency-numbers-of-all-universities-for-csc-scholarship-china/
অন্যান্য তথ্যের জন্য
তথ্যসুত্রঃ
- https://www.kholabakso.com/latestupdate/csc2019
- https://rhriyadhasan.blogspot.com/p/blog-page_28.html
- https://www.educationbangla.com/স্কলারশীপ-নিয়ে-পড়ার-সুযোগ-চীনে/8413
- https://bcysa.org/news_item/38
- https://www.facebook.com/notes/m-shahanul-islam/চীনের-লাখ-টাকার-csc-স্কলারশিপটি/1748274948541615/
- https://www.prothomalo.com/life/durporobash/চীনে-বাংলাদেশি-শিক্ষার্থীদের-জন্য-বিরাট-সুযোগ
- https://www.pikdigg.com/chinese-government-scholarship/
লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ
সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সমুহঃ
- স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ - হাঙ্গেরিতে… হাঙ্গেরি ইউরোপের একটি অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এটি মধ্যে ইউরোপের…
- ব্রেক্সিট–পরবর্তী নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা ব্রেক্সিট–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার…
- রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ,নিজের আবেদন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যয়বহুল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের জন্য হয়ে ওঠে…
- আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ, নিজের আবেদন নিজেই করুণ নিজের আবেদনের আজকের পর্ব সাজানো হয়েছে বিশ্বের অন্যতম…