বিদেশে পড়তে যাবার ইচ্ছা আমাদের অনেকেরই আছে- হোক সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা কোন নবীন কিশোর কিম্বা চাকুরীতে মগ্ন কোন সরকারি বা বেসরকারি অফিস কর্মকর্তা। ইচ্ছে আমাদের ষোল আনাই আছে – কিন্তু সম্ভব হয়ে ওঠে না কারণ আমরা অনেকেই এর পেছনে সময় দিতে পারি না আবার অনেকেই খেঁই হারিয়ে ফেলি। কিন্ত সবচেয়ে যে কারণটি এখানে মুখ্য তা হলা- আমাদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত না জানা আর সঠিক গাইডলাইন না থাকা।
Image Source: pexels.com
তাই আমারা আপনাদের অধরা স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য যাবতীয় তথ্য ও উপাত্তের পশরা নিয়ে এসেছি। এক এক করে তুলে ধরা হবে বিদেশে অধ্যয়নের যাবতীয় বিষয়-আশয়। আজকের আলোচনার বিষয়ঃ শুরুটা ঠিক কবে থেকে, আর কখন থেকে এবং কিভাবে করতে হবে।
যাদের ইচ্ছা গ্রাজুয়েশন
উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করে যারা গ্রাজুয়েশনের জন্য বিদেশে যেতে চায়, তাদের জন্য প্রথমত দরকার কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা। যদি ভালো লাগে কম্পিউটারের সামনে বসে কোডিং করতে তাহলে উচিত হবে প্রোগ্রামিং করা, যদি ইচ্ছে হয় রোবট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে, আর যদি থাকে ধৈর্য্য তাহলে উচিত হবে মেকানিক্যাল কিম্বা ইলেক্ট্রিক্যাল নিয়ে পড়াশুনা করা। তবে ইচ্ছাটাকে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি চাকুরীর বাজারেও একটু ঢু দিয়ে আসা। তারপর লেগে যেতে হবে পড়তে যাবার দেশ নির্বাচনের বিষয়ে ও যে বিষয়ে পড়তে যাবে সেই বিষয়টি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল পড়ানো হয়, সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে। সব তথ্য সংগ্রহের পর সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে পাড়ি যমাতে হবে বিদেশে।
যাদের ইচ্ছা মাস্টার্স আর পোস্ট গ্রাজুয়েশন
যারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে গ্রাজুয়েশন করে ফেলেছে, তাদের সাবজেক্ট মোটামুটি ঠিক করা থাকে। অনেকেই নিজের বিষয়ের বাইরে গিয়ে অর্থনীতি- এমবিএ কিম্বা ফাইন্যান্স নিয়ে পড়াশুনা করে। এই সব ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার অনুযায়ী কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করলে ক্যারিয়ার আরও ঊজ্জ্বল হবে, সে বিষয়ে জানতে ও ভাবতে হবে। যারা বিদেশে পড়তে যাতে চান, তাদের উচিত হবে গ্রাজুয়েশন ৪র্থ বর্ষ থেকেই এই বিষয়ে খোঁজ- খবর নেওয়া। কোন দেশে যেতে কি কি কাগজ পত্র ও কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন পড়বে সে বিষয়ে ধারণা নেওয়া।
কোয়ালিফিকেশন টেস্টঃ কার জন্য কোনটি প্রযোজ্য
GRE নাকি GMAT
বিদেশে পড়তে যেতে কি করব? কোন পরীক্ষা দিব এই বিষয়ে সংশয় কম বেশি সবার থাকে। সাধারণতঃ আমেরিকায় যারা পড়তে যেতে ইচ্ছুক তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য প্রয়োজন GRE, যার পূর্ণরূপ Graduate Record Examination। আর যারা ব্যবসা অথবা মানবিক বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য আছে GMAT, Graduate Management Admission Test. যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিদেশে যেতে চায় অথবা বিদেশে কোন কলেজে ভর্তি হতে চায়, তারা SAT বা Scholastic Aptitude Test দেয়। ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে আমেরিকাভিত্তিক GRE বা GMAT প্রয়োজন হয় না। তাই, স্বপ্ন যদি USA না হয় তবে GRE অথবা GMAT এর বালাই নেই। GRE/ GMAT এর মেয়াদ ৫ বছর থাকে। তবে ২/৩ বছরের বেশি সময় হলে প্রফেসররা আবার পরীক্ষায় বসার সাজেশন দেয়।
IELTS নাকি TOEFL
ইংরেজী ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ দেবার জন্য আমাদের বেছে নিতে হয় IELTS (International English Language Testing System) অথবা TOFEL (Test of English as Foreign Language)। এই পরীক্ষা দুইটি মোটামুটি সব দেশেই গ্রহণযোগ্য। IELTS মূলত UK ও Australia ভিত্তিক ভাষাগত দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা। তাই, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে IELTS বেশি প্রাধান্য পায়। আর TOFEL মূলত আমেরিকা ভিত্তিক ভাষাগত পরীক্ষা হবার দরুন USA তে TOFEL এর গুরুত্ব বেশি। তাই নিজের নির্বাচিত গন্তব্য অনুযায়ী, যে কোন একটি পরীক্ষায় বসা উচিত। এই দুই পরীক্ষারই মেয়াদ ২ বছর। তবে এ ব্যাপারে উল্লেখ্য যে, IELTS অথবা TOEFL এর ঝুট-ঝামেলা বাদেও অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। তাই সবসময় যে এই পরীক্ষাগুলো দিতেই হবে তারও কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। দেশ- বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে সব কিছুই নির্ভর করে। তাই ইচ্ছা থাকলে উপায়ের অন্ত নেই।
Image Source: pexels.com
IELTS Score ছাড়া মিলবে কি সফলতা?
অনেকে জেনেই খুশি হবেন যে, IELTS Score ছাড়াও পেতে পারেন বিদেশে পড়াশুনা করার সুযোগ। না, মোটেও অসম্ভব কিছু বলছি না। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার মাধ্যম বা Medium of Instruction হল English. এখানে উল্লেখ্য হল, বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় মিদিয়াম অফ ইন্সট্রাকশনকে অনেক মূল্যায়ন করে, এমনকি এটাকে IELTS বা TOEFL এর সমতুল্য হিসেবে গ্রহণ করে। তাই, যারা ভাবছেন IELTS দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না, বা মনে করছেন IELTS দিয়ে প্রয়োজনীয় স্কোর করতে পারবেন না- তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “Medium of Instruction” সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন এবং এপ্লাই করুন। এভাবে এমনি IELTS ছাড়াই এপ্লাই করতে পারবেন। সাধারণত বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম কন্ট্রোলার থেকে আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্যারের দপ্তর থেকে এই সার্টিফিকেট সংরহ করতে পারবেন। এখানে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ হবে না, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আপনাকে IELTS/ TOEFL সার্টিফিকেট দিতে হবে।
কাগজপত্রের তোড়-জোড়
প্রথমত, Application প্রসেস করার শুরুতেই প্রয়োজন পড়বে CV, SOP (Statement of Purpose), Mark-Sheets, IELTS/ TOFEL Result, Bank Solvency Certificate। এই সব কাগজপত্র দিয়ে আবেদন শুরু করার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যাবে Confirmation of Enrollment। এই Confirmation of Enrollment এর সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিবাহের সনদ(যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন), জন্ম সনদ, ট্যাক্স সনদ, ইত্যাদি দিয়ে Visa এর জন্য আবেদন করতে হয়। সকল ডকুমেন্ট ঠিক ঠাক থাকলে তবেই মিলবে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা।
কোথায় সে দেশঃ কোন সে বিশ্ববিদ্যালয়?
দেশের বাইরে পড়তে যাবার জন্য প্রথমত দরকার কোন দেশে পড়তে যাবেন ও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে যাবেন সেই বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন করা। এই পথ বাৎলে দিতে এই পর্বের আলোচনাঃ কোন দেশে পড়তে যাবেন তা নিয়ে।
Image Source: pixabay.com
দেশ নির্বাচনঃ কোন দেশে পড়তে যাবেন
দেশ নির্বাচন সবসময়ই একটি জটিল প্রক্রিয়া। এক এক দেশে এক এক রকমভাবে যাচাই করা হয় প্রত্যেক ক্যান্ডিডেটকে। আবার সব দেশের আচার-আচরণ, জীবন- জীবিকা, আবহাওয়া, স্কলারশিপের সুযোগ, পড়ার পাশাপাশি অথবা পড়া শেষে কর্মে প্রবেশের সুযোগ এক রকম নয়। তাই, সব দিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই সব সময় উচিত হবে কমপক্ষে এক বছর আগে থেকে প্রিপারেশন শুরু করা। এই বিষয়ে তাড়াহুড়ো ভালো হবে না। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের তালিকায় যে সব দেশ রাখে তাদের মধ্যে রয়েছে – আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানী, ব্রিটেন, চীন, মালয়েশিয়া সহ অন্যান্য দেশ। এই দেশেগুলোর মাঝে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা পরবর্তী সিটিজেনশিপ লাভের সুযোগ বেশি। এবার আস্তে আস্তে চলুন জেনে নেই – কিছু পছন্দসই দেশের সাত-সতেরো।
১। আমেরিকা
সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বাঙ্গালী ছাত্র-ছাত্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। বাঙ্গালী শিক্ষার্থী শুধু নয়, বিশ্বের সব দেশের সব চেয়ে বেশি জ্ঞানপিপাসুরা অবস্থান করছে এই দেশে আর জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় রিসার্চ করছে। আমেরিকায় রিসার্চ সেক্টরে প্রচুর বরাদ্দ থাকায় এই দেশ সবার পছন্দের এক নম্বরে থাকে। তবে আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের টানাপোড়েনে অনেক সময় অনেক রকম বিপত্তি দেখা যায়- যদিও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। আমেরিকায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এক এক রকম টাইম জোন [আমেরিকায় মোট ৫টি টাইম জোন] থাকে আর আবহাওয়ায় বেশ রকম ফের আছে। এই জন্য কোথায়- কোন অঙ্গরাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে একটু খোঁজ নেওয়া বেশ জরুরী। আমেরিকাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে GRE/ GMAT/ SAT এবং ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে TOEFL-কে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়। তবে কেউ যদি IELTS দিয়েও আবেদন করতে চান, তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সেটা গ্রহণ করে নেয়। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলোয় TA (Teachers’ Assistant)/ RA (Research Assistant) এর কাজ পাওয়া যায়। এজন্য মেধাবীদের Part-time কিছু রোজগারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে Blue Collar Job-ও করার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জানতে ও আরও তথ্য নিতে Education USA (https://educationusa.state.gov/) এর ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতে পারেন।
২। ব্রিটেন
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় ও অবস্থান ভেদে অনেক তারতম্য হয়। অর্থাৎ, লন্ডনে পড়তে যে খরচ হয়ত হবে, তার ঠিক অর্ধেক খরচে হয়তো অন্য কোন শহরের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যাবে। UCAS (https://www.ucas.com/) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়- এছাড়া নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দিয়েও আবেদন করা যায়। ব্রিটেনে পড়তে শুধু IELTS- এ ভালো স্কোর থাকলেই হচ্ছে। যুক্তরাজ্য আইন, ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষদের জন্য এখনও এই দেশকে স্বর্গ ধরা হয়। এই দেশে পড়াশুনার পাশাপাশি Part- Time চাকুরী পাওয়া যায়। তবে পড়াশুনা শেষ করে এই দেশে PR (Permanent Residency) পাওয়া অনেকটা মিশন ইম্পসিবলের গল্পের মত।
৩। অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ভালো IELTS স্কোরকে অনেকটা গুরুত্ব দেয়- যদিও প্রকাশ্যে বলা হয় না। তারপরও, অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাবার সময় ভালো IELTS স্কোর থাকলে খুব সুবিধা পাওয়া যায়। এই দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কিম্বা সাইন্সে পড়তে ৭.০ IELTS স্কোর চাওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বের তৃতীয় পড়তে-যাবার ডেস্টিনেশন ধরা হয়। এই দেশে পড়াশুনা শেষ করার পর বেশ সহজেই PR পাওয়া যায়। সাধারণত পড়াশোনা শেষ করার পর ১.৫ থেকে ২ বছর সেখানে চাকুরী করলে PR পাওয়া যায়। এদেশে পড়াশোনা চলার সময় Part- Time আর ছুটিতে Full Time Job পাওয়া যায়।
৪। কানাডা
বিদ্যার্জনের আরেক ডেস্টিনেশন হল কানাডা। শীত প্রধান এই দেশে পড়াশুনা শেষ করে Permanent Resident হয়ে যাবার সুযোগ খুব বেশি। নান্দনিক এই দেশে নাগরিক সুবিধা ও উন্নত জীবন-যাপনের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি আগ্রহী হয় এই দেশে আসতে। কানাডা CGPA ও IELTS স্কোরকে খুব প্রাধান্য দেয়। তাই এই দেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এই দু’টো দিকে একটু খেয়াল দিতে হবে।
৫। ইউরোপ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমনঃ জার্মানী, সুইডেন, নরওয়ে জ্ঞান পিপাসুদের পছন্দের পীঠস্থান। জার্মানীতে ইংরেজী ভাষা ও জার্মান ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। জার্মান ভাষা জানা থাকলে এ দেশে এক্সট্রা সুবিধা পাওয়া যাবে। সুইডেনে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্ত্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এরফলে আপনি আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে যাবেন। নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে পড়তে আপনার এক পয়সাও ব্যয় হবে না- কারণ এই দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আর আপনি যদি পেয়ে যান স্কলারশিপ তাহলে অন্যান্য খরচের ব্যয় নিয়েও আর চিন্তা করতে হবে না।
দেশ ও তার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শিক্ষার মান বিভিন্ন। নিজের ইচ্ছা ও যে দেশে আপনি পড়তে যাবেন সেই দেশের বিবেচনায় আপনাকে তৈরী হতে হবে। তবেই মিলবে উচ্চ শিক্ষার সোনার হরিণ।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন – কেন গুরত্তপূর্ন এবং কিভাবে করবেন
দেশ নির্বাচনের পর পরের কাজ বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা। বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের জন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং এর। ওই দেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের নয়নের মণি সে বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া দরকার। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ প্রদান করে কি না- আবার, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর পোর্ট-ফোলিও কতটা উজ্জ্বল হবে সেই সব বিষয়ও মাথায় রেখে এগোতে হবে। আপনি নিম্নোক্ত লিংকে ক্লিক করে জেনে নিতে পারেন বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল-হকিকতঃ https://www.topuniversities.com/university-rankings/world-university-rankings/2020
Image Source: pixabay.com
বিশ্বে নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আপনাকেও নিজেকে গড়ে নিতে হবে। CGPA, GRE Score এবং IELTS/ TOEFL Score এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে CGPA কম থাকায় মুসড়ে পরে, কিন্তু আমি বলব, এখানে থেমে যাওয়ার কিছু নাই। যদি পরিশ্রম করার ইচ্ছা থাকে তবে জয় একদিন হবেই। CGPA কম থাকলে, তাকে অন্যান্য বিষয় দিয়ে পুশিয়ে নিতে হবে। আপনার কো-কারিকুলাম কার্যক্রম, ভালো অনুপ্রেরণাদায়ক SOP কিম্বা নিজেকে উপস্থাপন করার ধরণ, কর্মে অভিজ্ঞতা, Publication, Software Expertise ইত্যাদি হতে পারে আপনার অস্ত্র যদি আপনার CGPA কম থাকে। আর CGPA ভালো থাকলে আপনাকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুঁজছে- শুধু দেরি আপনার আবেদনের। সামনে এগোতে কে আপনাকে রুখে দাঁড়াবে?
স্কলারশিপ না সেলফ ফান্ডিং
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা মূলত ব্যয়বহুল। তাই, অনেকে পক্ষেই এই ব্যয় বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা মূলত স্কলারশিপের খোঁজ করে থাকে। কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রোগ্রাম হলঃ
১। যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ এবং শেভেনিং স্কলারশিপ ২। কানাডার হাম্বার ইন্টারন্যাশনাল এন্ট্রান্স স্কলারশিপ ২। জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বৃত্তি ৩। যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্টস প্রোগ্রাম ৪। এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ৫। জার্মানির ডিএএডি ৬। অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ
এছাড়া প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে নিজস্ব ফান্ডিং ব্যবস্থা। এ বিষয়ে প্রফেসরের শরণাপন্ন হলে মিলবে সৎ পরামর্শ। আর যারা এই ব্যয়ভার বহনে সামর্থ তাদের এই ঝক্কি পোহানোর কোন দরকার নেই। সেলফ ফান্ডিং এর আওতায় আপনি যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে পারবেন।
আর্থিক সামর্থ্য বা সচ্ছলতার সনদ (সলভেন্সি সর্টিফিকেট)
সবই তো হলঃ দেশ বাছাই হল, বিশ্ববিদ্যালয়ও পাওয়া গেল- এবার ভিসা নিতে গেলে প্রয়োজন পড়বে আর্থিক সামর্থ্য বা সচ্ছলতার সনদ। যদি আপনি ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পান, তাহলে আপনাকে ভ্রমণ, স্বাস্থ্য বীমা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানের প্রমাণক দিতে হবে। আর যদি সেলফ ফান্ডিং বা আংশিক বৃত্তি পান, তাহলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহের জন্য অর্থের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে। যদি আপনি নিজে কিম্বা আপনার নিকট আত্মীয়, যেমনঃ বাবা, মা, ভাই , বোন এই ব্যয়ভার বহন করেন, তার সম্মতিপত্র ও তার আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ দিতে হবে। এ জন্য TIN (Tax Identification Number) ও Bank Solvency Certificate গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, যার মাধ্যমে আপনি আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেন।
ইউনিভার্সিটিতে ডকুমেন্ট পাঠানোর উপায়
বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্ট পাঠানোর আগে প্রথমে জানতে হবে সেখানে আদৌ ডকুমেন্ট লাগবে কি না? অনেক বিশ্ববিদ্যালয় Paperless Concept এর কারণে শুধু অনলাইন আবেদনই চায়। সেক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে ডকুমেন্টস পাঠাতে হবে না। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখানে অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি ডকুমেন্টসগুলোর হার্ড কপিও লাগে। সেই জন্য আছে FedEX,DHL। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে বাংলাদেশের সরকারি পোস্ট অফিসের EMS সেবাও নিতে পারেন। কম খরচে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ পৌছে দেবে আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলারশিপ, ফান্ডিং ও আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র সবই যোগাড়-যন্ত্র করে আপনি পাড়ি জমাবেন আপনার পছন্দের গন্তব্যে। বিদেশের মাটিতে প্রতিটি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের এক এক জন রাষ্ট্র দূত। তাই, আমাদের উচিত সবসময় দায়িত্বশীল আচরণ করা। যাই হোক, শুরু করে দিন প্রস্তুতি- সময় এখন আপনার।
সতর্কবানীউপরোক্ত আর্টিকেল এর সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রীহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া এবং এম্বেসী এর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল। হালনাগাদ তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং এম্বেসী এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উপরোক্ত আর্টিকেল এর কোন তথ্য/উপাত্ত আপনার কাছে ভুল মনে হলে সঠিক তথ্যের রেফারেন্স/ওয়েবলিংক সহ নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these cookies, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may have an effect on your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. This category only includes cookies that ensures basic functionalities and security features of the website. These cookies do not store any personal information.
Any cookies that may not be particularly necessary for the website to function and is used specifically to collect user personal data via analytics, ads, other embedded contents are termed as non-necessary cookies. It is mandatory to procure user consent prior to running these cookies on your website.