অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুন নিজের আবেদন

বিশ্ব এখন আপনার হাতের মুঠোয়। আপনি চাইলে ইন্টারনেটের এক ক্লিকে দেখছেন আপনার বিদেশী বন্ধুদের বা আত্মীয় স্বজনদের। শুধু কি তাই, আপনি চাইলেই পাড়ি জমাতে পারেন বিশ্বের যেকোন দেশে। আর যাদের ইচ্ছা বাইরের দেশের ডিগ্রী তাদের জন্য বিশ্ব আজ উন্মুক্ত। যে কোন দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপ অনেকের প্রিয় ডেস্টিনেশন। আর ইউরোপের মনোরম দেশ আস্ট্রিয়া, সে তো অনেকেরই স্বপ্নের স্থান। এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরবো আস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা লাভের কিছু কার্যকরী গাইডলাইন।

অস্ট্রিয়া দেশ হিসেবে যেমন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আস্ট্রিয়া। ভিয়েনা রাজধানী আর ইউরো মুদ্রা বিশিষ্ট আস্ট্রিয়ার ভাষা জার্মান/ডয়েচ। ৪৭৮ বিলিয়ন ডলার (২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী) জিডিপি-এর এই দেশে প্রায় ৮৯ লক্ষ জনগণ বসবাস করে এবং আস্ট্রিয়ার আয়তন ৮৩,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার। আর্থিক মাথাপিছু আয়ের হিসেব অনুযায়ী অস্ট্রিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। দেশটির অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত। শীতকালে এই দেশের তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি থেকে নীচে নেমে যায় (সেলসিয়াস স্কেল) আর গরম কালে তাপমাত্রা২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে।

Hallstatt, Austria
Image Source: pixabay.com

যোগ্যতা যাচাই ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই

অস্ট্রিয়ায় ব্যাচেলর কোর্স সাধারণত জার্মান/ডয়েচ ভাষায় করতে হয়। ব্যাচেলর কোর্স এর জন্য জার্মান/ডয়েচ B2 লেভেল সম্পন্ন করতে হবে। ল্যাংগুয়েজ কোর্স আপনি বাংলাদেশেও করতে পারেন অথবা অস্ট্রিয়াতে ও করতে পারেন।  বাংলাদেশে সম্পন্ন না করলে প্রথম একবছর অস্ট্রিয়াতে জার্মান ভাষা পড়ার পরে ব্যাচেলর কোর্স করতে হবে।

অস্ট্রিয়ার প্রধান পড়াশুনার ভাষা জার্মান হলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজী ভাষায় কোর্সও রয়েছে। আপনি যদি ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যেতে চান তাহলে HSC + ১ বছর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে হবে। সেই সাথে ন্যূনতম ৫০% মার্ক্স অর্জন করতে হবে। যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে চান, তাহলে ব্যাচেলর ডিগ্রী আর পিএইচডি প্রোগ্রামে যেতে মাস্টার্স ডিগ্রী থাকতে হবে।

অস্ট্রিয়ায় মোট ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২১টি এপ্লাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্ট নিচে দেওয়া হলঃ

  1. University of Vienna | http://www.univie.ac.at
  2. Vienna University of Technology | http://www.tuwien.ac.at
  3. Medical University of Vienna | http://www.mediuniwien.ac.at
  4. University of Graz | http://www.uni-graz.at
  5. Graz University of Technology | http://www.tugraz.at
  6. University of Innsbruck | http://www.uibk.ac.at
  7. Vienna University of Economics and Business | http://www.wu.ac.at/

ইউরোপের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। ১২০টির বেশি ডিগ্রি প্রোগ্রাম পড়ার সুযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২২টি ব্যাচেলর প্রোগ্রাম, ২৯টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম, ৪৯টি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম এবং ২৪টি টিচার অ্যাক্রিডিয়েশন প্রোগ্রাম ছাড়াও ৮০টি ক্ষেত্রে ডক্টরাল প্রোগ্রাম পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

 

কোর্স খুঁজতে নিম্মোক্ত ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন-

http://www.studienwahl.at/Content.Node/homepage.en.php

TU Wien, Austria
Image Source: Internet

ভাষাগত যোগ্যতা

অস্ট্রিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারনত জার্মান ভাষায় শিক্ষাদান করা হয়। যদি আপনি জার্মান ভাষায় পড়াশুনা করতে চান, তাহলে আপনাকে জার্মান ভাষার B2 পরীক্ষায় পাশ করে আসতে হবে। আর আপনি চাইলে আস্ট্রিয়া গিয়েও এই কোর্স করতে পারবেন। সরকারী ইউনিভার্সিটিগুলোতে জার্মান ভাষা শিখতে প্রতি সেমিস্টার ৪৫০-৫০০ ইউরো এর মত লাগবে। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে সেটা অনেক বেশি ( ১৫০০-২৫০০ ) ইউরো এর মত লাগবে।

 

ইউনিভার্সিটিতে ভ র্তির জন্য IELTS অত্যাবশ্যকীয় নয়, তবে ভিসা আবেদনের পূর্বে অবশ্যই IELTS স্কোর ৫.৫ থাকতে হবে। মাস্টার্স কোর্স ইংরাজি ও জার্মান ভাষাতে আছে। ইংরাজিতে পড়াশোনার জন্য IELTS ৬/৬.৫ থাকতে হবে।

ডকুমেন্টস সত্যায়ন

সকল একাডেমিক কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হবে যথাক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রিয়ার এম্বেসী দ্বারা। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র সত্যায়ত করার পর আপনি যখন এগুলো এম্বেসীতে জমা করবেন, এম্বেসী কনস্যুলেট সেগুলোকে VFS ঢাকা অফিসে পাঠাবে এবং এর ফি বাবদ ৪৩,১২০ টাকা থেকে ৪৭,০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এরপর সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করার পর VFS সেটা পুনঃরায় এম্বেসীতে পাঠাবে এবং তারপর এম্বেসী কনস্যুলেট তা সত্যায়িত করবে।

অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেটর, ঢাকা, বাংলাদেশ এর ওয়েবসাইট ও ঠিকানা :

Austrian Honorary Consulate in Dhaka, Bangladesh –

Safura Tower, 5th Floor, 20 Kemal Ataturk Avenue,
Dhaka – 1213, Bangladesh
Phone (Local): (02) 986.1707, Internation: +880.2.986.1707
Email: [email protected]

ভিএফএস ঢাকা এর ঠিকানা –

Austria Visa Application Centre

4th Floor, Delta Life Tower, Plot 37, Road 90,
Gulshan North, Dhaka-1212, Bangladesh.

Submission schedule: 14:00 to 16:30 (Sunday -Thursday).
Passport retrieval schedule: 15:00 to 16:00(Sunday – Thursday).
Information: Sunday to Thursday 14:00 to 15:00 hours

ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া

অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাধারণত দুই সেমিস্টার থাকে। প্রথমটি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে আর পরেরটি মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। অস্ট্রিয়ার ভর্তি, অফার লেটার, ডকুমেন্ট এটাসটেশন, ভিসা- পুরো প্রসেস অনেক সময় সাপেক্ষ (৬ থেকে ১২ মাস)। তাই আগে ভাগেই কাজ শুরু করতে হবে।

ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা নীচে দেওয়া হলঃ

১। পূরণকৃত আবেদন ফর্ম

২। সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট এর সত্যায়িত কপি

৩। আইইএলটিএস (ন্যূনতম ৬.০) / জার্মান B2 সনদ

৪। এন আই ডি/পাসপোর্ট কপি

৫। মোটিভেশন লেটার/ সিভি/ রেফারেন্স লেটার

৬। কাজের অভিজ্ঞতা/ রিসার্স পেপার (যদি প্রয়োজন হয়)

Students in Austria
Image Source: Internet

বিনা বেতনে বা স্বল্প খরচে পড়ার সুযোগ

ইউরোপের যেসব দেশে স্বল্প খরচে পড়াশোনা করা যায় তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। অস্ট্রিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার টিউশন ফি দিতে হয় না, তবে সেমিস্টার ফি ১৯ ইউরো দিতে হবে। তবে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আবেদন করার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় – এর সাথে মেইল করে এর এডমিশন ও টিউশন ফি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়াই ভালো।

আর্থিক সচ্ছলতার প্রমান/ব্যাংক সলভেন্সি সনদ

ব্যাংক সলভেন্সির জন্য আপনার একাউন্টসে ৫৮৯৭.১৬ ইউরো (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের নীচে হয়) অথবা ১০৬৭৮.০৮ (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের বেশি হয়) ইউরো। আপনার স্পন্সর মা-বাবা-স্ত্রী থেকে যেকোন আত্মীয় হতে পারে। তবে মনে রাখবেন টাকার উৎস, ট্যাক্সের ডকুমেন্ট সকল কিছু ভিসার জন্য জমা দিতে হবে। স্পন্সর যদি আস্ট্রিয়ায় বসবাস করে তবে আরো ভালো। ভিসা পাওয়ার পর আপনি চাইলে এই টাকা তুলে ফেলতে পারবেন।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে এম্বেসী না থাকা ভিসার জন্য আপনাকে ইন্ডিয়াতে যেতে হবে। এজন্য প্রথমেই আপনাকে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। যে সকল কাগজপত্র জমা দিবেন তার মূল কপির সাথে ২ সেট ফটোকপিও নিয়ে যাবেন।

ডকুমেন্ট চেকলিস্টঃ

১। পূরণকৃত আবেদন ফর্ম ও সাথে সংযুক্ত পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫ মিমি x ৪৫ মিমি)

২। এপয়েন্টমেন্ট লেটার আর এপন্টমেন্ট নিতে ভিজিট করুনঃ

https://appointment.bmeia.gv.at/?Office=new-delhi
৩। পাসপোর্ট

৪।ইউনিভার্সিটি অফার লেটার

৫। সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত/ মোটিভিশন লেটার

৬। সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট এর সত্যায়িত কপি

৭। আইইএলটিএস বা জার্মান ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট

৮। টিউশন ফি পেমেন্ট-এর কপি

৯। ট্রাভেল হেলথ ইনস্যুরেন্স  

১০। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কনসুলেট অফিস কর্তৃক সত্যায়িত)

১১। একোমোডেশ ন কনফার্মেশন লেটার

১২। বার্থ সার্টিফিকেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং কনসুলেট অফিস কর্তৃক সত্যায়িত)

১৩। জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট (মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য)

১৪। স্পন্সের এফিডেভিড পেপার

১৫। স্পন্সর যদি ব্যবসায়ী হয়, তাহলে

  • ৬-মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • আপডেটেড TIN ও ট্যাক্স রিটার্ন পেপার

স্পন্সর চাকুরিজীবি হলে প্রয়োজন হবে

  • আই,ডি ও স্যালারী উল্লেখপূর্বক জব সার্টিফিকেট
  • জব আই,ডি কার্দের কপি
  • ৬-মাসের স্যালারী স্টেটমেন্ট

১৬। স্পন্সরের একাউন্ট থেকে এপ্লিকেন্টের একাউন্টে টাকা পাঠানোর পেমেন্ট প্রুফ

১৭। এপ্লিক্যান্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট

Visa Application - Austria
Image Source: Internet

অস্ট্রিয়ান এম্বাসি নিউ দিল্লি এর ঠিকানাঃ

Austrian Embassy New Delhi

EP-13, Chandragupta Marg Chanakyapuri New Delhi 110 021 India

T: (+91/11) 2419 2700
F: (+91/11) 2688 6929
e-mail: new-delhi-ob(at)bmeia.gv.at

Opening hours: Mo – Th 08:30 – 17:00, Fr 09:00 – 15:00

জীবন যাত্রার ব্যয় এবং পার্ট টাইম জব

অস্ট্রিয়ায় থাকা খাওয়া বাবদ আপনার ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো প্রতি মাসে খরচ হবে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত আপনি এই দেশেও ২০ ঘন্টা পার্ট টাইম চাকুরি করতে পারবেন। তবে সামারে ফুল টাইম জব করার সুযোগ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন রেস্তোরা, শপিংমল, হোটেলে কাজ করতে পারবেন।  তবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রিয়া যাওয়ার  সময় সাথে ৬-৮ মাসের খরচ নিয়ে যাওয়াই উত্তম। এছাড়া জার্মান ভাষা জানা থাকলে জব পাওয়ার সম্ভবনা একটু বেশি থাকে।

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে নূন্যতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) জন্য আবেদন করতে হবে।আর পড়াশুনা শেষে এক বছরের জব সার্চ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

Life in Austria
Image Source: pixabay.com

সুতরাং আস্ট্রিয়ায় পড়তে যেতে চাইলে আপনি এখন নিজেই করতে পারবেন নিজের আবেদন।

তথ্যসুত্রঃ

লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments