Skype এর নাম শুনিনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। অনলাইন অডিও- ভিডিও কলের প্রথম পর্যায়ের দিসারী স্কাইপি ছিল এস্তোনিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। সেই এস্তোনিয়া নিয়ে আজ আপনাদের সামনে আমরা হাজির হয়েছি। ইউরোপে পাড়ি জমানো স্বপ্ন হলে আপনি এস্তোনিয়াকেও রাখতে পারবেন নিজের পছন্দের তালিকায়। শুধু কি তাই? অসাধারণ সমুদ্র আর অনাবিল প্রাকৃতিক পরিবেশের দেশ এস্তোনিয়া বিদ্যার্জনের জন্য যেন এক স্বপ্নরাজ্য। আজ আপনাদের এস্তোনিয়ায় পড়াশুনা ও ক্যারিয়ারের যাবতীয় বিষয়গুলো তুলে ধরব।
কেন এস্তোনিয়াতে পড়তে যাবেন?
বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী এস্তোনিয়ার উত্তরদিকে ফিনল্যান্ড ,দক্ষিণে রয়েছে লাতভিয়া, পূর্বে রাশিয়া, এবং পশ্চিমে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। এই দেশের সরকারি নাম এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র, রাজধানী তাল্লিন, মুদ্রা ইউরো ও ভাষা এস্তোনিয়ান। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছবির মত সুন্দর এই দেশ যার পরতে পরতে সাজানো আছে নানা গীর্জা, টাউন হল, ওল্ড টাউন, জাদুঘরসহ প্রাচীন অনেক ঐতিহ্য। সেনজেনভুক্ত এ দেশটির আয়তন ৪৫,৩৩৯ বর্গ কিঃমিঃ আর বসবাস প্রায় ১৪ লক্ষ লোকের। ডিজিটাল পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত এই দেশকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম “e- Country”। প্রাচীন ও আধুনিকতার এস্তোনিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা খুব উন্নত।
Image Source: pixabay.com
এই দেশের বছরে তিন মাস মেয়াদী চারটা ঋতু দেখা যায়। এই দেশে গরমে তাপমাত্রা থাকে ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর শীতকালে থাকে -৩.৫ থেকে -৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ দেশের মাথাপিছু জিডিপি ২৯,৩১২ মার্কিন ডলার।
ইংরেজি ভাষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশে ভাষাগত বিরম্বনা কিছুটা কম পোহাতে হয়।
এস্তোনিয়ায় পড়তে যাবার নূন্যতম যোগ্যতা
এস্তোনিয়ায় বছরে একটা সেমিস্টারই পড়ানো হয় এবং এই সেমিস্টার চলে ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত। তাই এই সময়কে মাথায় রেখে আবেদন করতে হবে।এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এস্তোনিয়ান ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পড়ানো হয়। এখানে ১০০টির বেশি ইংরেজি কোর্স রয়েছে।
সাধারণত এস্তোনিয়ায় পড়তে আপনার একাডেমিক পরীক্ষায় ৫১% নম্বর অর্জন করতে হবে আর IELTS- এ থাকতে হবে 5.5 -6.5 স্কোর। এই যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই আপনাকে অনুসরণ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট আর সে বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন অফিস। এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, তাল্লিন বিশ্ববিদ্যালয় ও তাল্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র ব্যাচেলরে আবেদনের জন্য প্রয়োজন পড়বে ৬০% নম্বরের। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম কোন নিয়ম নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে।
কোর্স সার্চ ও কোর্স নির্বাচন
এস্তোনিয়ায় আপনি পড়তে পারবেন সব বিষয়েই। তবে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নিজের কোর্স নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি বিদ্যার দিকে বিশ্বের মানুষের অনেক ঝোঁক আর চাকুরীর বাজারেও বেশ চাহিদা। সেই একই প্রেক্ষাপটে এস্তোনিয়ায়ও বর্তমানে প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ক প্রোগ্রামগুলোর চাহিদা বেশি। আপনি চাইলে এই দেশে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি, এমনকি বিভিন্ন শর্ট কোর্স করতে পারবেন। এস্তোনিয়ায় মোট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ৮টি স্টেইট প্রফেশনাল হাইয়ার এডুকেশনাল ইন্সটিটিউশন, ৫টি প্রাইভেট প্রফেশনাল হায়ার এডুকেশনাল ইন্সটিটিউশন।
এস্তোনিয়াতে অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত কোর্স খুঁজতে নিম্মোক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এর সাহায্য নিতে পারেন: www.estonia.dreamapply.com
কোর্স সম্পর্কে আপনার অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়/প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে আপনার একাডেমিক দক্ষতা ও ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য স্কাইপ ইন্টারভিউ নিতে পারে। স্কাইপ ইন্টারভিউ দেওয়ার ০৩ সপ্তাহের মধ্যে আপনার ই-মেইলে ভর্তির ফলাফল জানানো হবে।
এস্তোনিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র চাওয়া হয়। আবেদনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হলঃ
১। একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট
২। IELTS এর সনদ
৩। মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার
৪। ইউরোপাস ফরম্যাটে CV
৫। পাসপোর্টের কপি ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৬। আপ্লিকেশন ফি পরিশোধের রশিদ
৭। জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টফিকেট (যদি থাকে)
Image Source: Internet
কিভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেনঃ
ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর পদ্ধতি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে । যদি আপনি নিজে প্রেরক হয়ে পাঠাতে চান তাহলে অবশ্যই নোটারাইজ কপি পাঠাতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনা থাকে এইরূপ যে, “আপনার সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনার পক্ষ থেকে ( প্রেরক হয়ে ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব খামে সকল ডকুমেন্ট(নোটারাইজ করার দরকার নেই) পোস্ট বা কুরিয়ারে ইস্তোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এড্রেসে পাঠাতে হবে” তখন ব্যাক্তিগত নিজের নাম ব্যাবহার করে ডকুমেন্ট পাঠালে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি)
এস্তোনিয়ায় পড়াশুনার খরচ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেকটা কম। এদেশে পড়াশুনা করতে আপনার প্রতি বছরে টিউশন ফি প্রয়োজন হবে ১,৭০০-৭,৫০০ ইউরো পর্যন্ত। মেডিকেল বিষয়ে পড়তে বাৎসরিক ১০,০০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স ভেদে এই টিউশন ফি কম ও বেশি হতে পারে।
এস্তোনিয়ায় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কোর্সে ফ্রি’তে পড়ারও সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থীর আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকে বা কোনো শিক্ষার্থীর একাডেমিক পারফরমেন্স ভালো থাকে অথবা এস্তোনিয়ান ভাষার কোনো কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্রিতে পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এ দেশে পিএইচডি প্রোগ্রামে কোন টিউশন ফি নেই।
স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ
এস্তোনিয়ায় বিভিন্ন ধরণের স্কলারশিপ রয়েছে। সরকারি অথবা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক স্কলারশিপ রয়েছে অনেক। একটু কষ্ট করলেই মিলে যাবে স্কলারশিপ। আর সেই স্কলারশিপ খুঁজে পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
এস্তোনিয়ায় আবেদন করার জন্য আপনাকে ভারতে অবস্থিত এম্বেসীতে যেতে হবে। এরজন্য প্রথমেই আপনাকে নিচের লিঙ্ক-এ আবেদন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। https://eelviisataotlus.vm.ee/
ভিসার জন্য আপনাকে জমা দিতে হবে নিম্নোক্ত কাগজপত্রঃ
১। পাসপোর্ট ও রিসেন্ট ছবি
২। মার্কশিট ও সকল সনদ
৩। IELTS স্কোরের কপি
৪। এডমিশন লেটার
৫। ভিসা আবেদন ফর্ম ও টেম্পোরারী রেসিডেন্স আবেদন ফর্ম
যোগাযোগের জন্য দিল্লী অফিসের ঠিকানা দেওয়া হলঃ
C15, Malcha Marg, Chanakyapuri New Delhi, 110 021, India
Tel +91 11 4948 8650 । Tel (+372) 613 4850 (calls from Estonia) Fax +91 11 4948 8651 । Email: [email protected] Visa queries: [email protected]
[ছুটি ব্যতীত সাধারণত সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভিসা আবেদন গ্রহণ করা হয়]
Image Source: pixabay.com
আবাসন ব্যাবস্থা, মাসিক খরচ এবং পার্ট টাইম জব এর সুযোগ
এস্তোনিয়ায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হোস্টেল সুবিধা আছে। আপনি ১০০ ইউরোর মধ্যে থাকার জন্য হোস্টেল পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনি থাকতে চান একক কোন ফ্লাটে, তাহলে আপনার দিতে হবে ১৮০ থেকে ৪৫০ ইউরো। আর অন্য দিকে আপনি ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরোর মধ্যে আপনার দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পারবেন।
ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা চাকুরী করার সুযোগ পাবেন। যদি জানা থাকে এস্তোনিয়ান ভাষা তাহলে আপনার জব পেতে সুবিধা হবে। তাই, এই দেশে যাবার আগে এই দেশের ভাষা জেনে নেওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
কোর্স শেষে চাকুরী ও স্থায়ী বসবাস এর সুযোগ
কোর্সে শেষে এস্তোনিয়ায় আপনি ৬ মাসের জব সার্চ ভিসা পাবেন। এই সময়ে আপনি জব পেয়ে গেলে আপনি আবেদন করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করতে পারবেন। আর এই দেশে আপনি একটানা ৯ বছর থাকলে আপনি নাগরিকত্ব পাবার জন্য আপ্লিকেবল হবেন।তবে এর জন্য আপানকে ইস্তোনিয়ান ভাষা, পার্মানেন্ট জব সহ আর কিছু রিকুয়ারমেন্ট পূরণ করতে হবে।
এস্তোনিয়া হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে বেস্ট ডেস্টিনেশন। তাই, আবেদন করুন এস্তোনিয়ায়।
সতর্কবানীউপরোক্ত আর্টিকেল এর সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রীহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া এবং এম্বেসী এর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল। হালনাগাদ তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং এম্বেসী এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উপরোক্ত আর্টিকেল এর কোন তথ্য/উপাত্ত আপনার কাছে ভুল মনে হলে সঠিক তথ্যের রেফারেন্স/ওয়েবলিংক সহ নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these cookies, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may have an effect on your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. This category only includes cookies that ensures basic functionalities and security features of the website. These cookies do not store any personal information.
Any cookies that may not be particularly necessary for the website to function and is used specifically to collect user personal data via analytics, ads, other embedded contents are termed as non-necessary cookies. It is mandatory to procure user consent prior to running these cookies on your website.