হাজার হৃদের দেস নামে পরিচিত সবুজ অরণ্যে ঘেরা ইউরোপের সবচেয়ে উত্তরের দেশ ফিনল্যান্ড। হেলসিংকি এ দেশের সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। ফিনল্যান্ড বর্তমানে উচ্চশিক্ষা আকাঙ্ক্ষীদের জন্য স্বর্গে পরিণত হয়েছে যার একমাত্র কারণ উচ্চমানের শিক্ষাব্যবস্থা। আর আপনাদের সুবিধার্থে আজ আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি ফিনল্যান্ড নিয়ে যেন আপনারা নিজেরাই করতে পারেন নিজেদের আবেদন- আর সহজেই পৌছে যেতে পারেন ফিনল্যান্ড।
ফিনল্যান্ডের যত বিশ্ববিদ্যালয়
ফিনল্যান্ডে ১৬টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও ২৭টি এপ্লাইড সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ফিনল্যান্ড ও ইউরোপীয় আধিবাসীদের জন্য ফ্রী হলেও ২০১৭ সালের পর থেকে নন-ইউরোপীয়দের জন্য টিউশন ফি পরিশোধ করতে হয়। ফিনল্যান্ডের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তুলে দেওয়া হল।
Aalto University
E-mail: [email protected] । http://www.aalto.fi/en/studies
Tampere University of Technology
[email protected] | http://www.tut.fi/en/admissions
University of Eastern Finland
[email protected] | http://www.uef.fi/admissions
University of Helsinki
[email protected] | https://www.helsinki.fi/en/studying/how-to-apply
University of Lapland
[email protected] | https://www.ulapland.fi/EN/Admissions
University of Oulu
[email protected] | http://www.oulu.fi/english/admissions
University of Vaasa
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা
এদেশে ৩ ভাষায় শিক্ষা প্রদআন করা হয়, যথাঃ ইংরেজী, সুইডিশ আর ফিনিশ। তবে মজার ব্যাপার হল, এদেশে প্রায় সবাই ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে পারে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ভাষায় সীমিত সংখ্যক কোর্স রয়েছে- তবে আশার কথা, Applied Science বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ভাষায় বিস্তর সংখ্যক কোর্স রয়েছে। তাই যারা Applied Science এর উপর কোর্স করবেন, তাদের জন্য এদেশে সুযোগ একটু বেশি। ফিনল্যান্ডে মাস্টার্স কোর্সে ভর্ত্তির জন্য বয়সের কোন বাধা নেই।
ফিনল্যান্ডে আপনি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বা চারটি বিষয়ে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ দেশের মাস্টার্স প্রোগ্রাম টেকনিক্যাল ভিত্তিক- আর ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্ত্তি হতে গেলে আপনাকে বসতে হবে পরীক্ষায়। এই ভর্ত্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হবে সাধারণ গণিত, আই,কিউ বিষয়ক এবং বিশ্লেষণাত্মক বিষয় নিয়ে। তাই আপনাকে আবার নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিতে হবে। মাস্টার্সে প্রোগ্রামে সাধারণত ভর্ত্তি পরীক্ষায় বসতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বর্ণিত যোগ্যতা থাকলেই চলবে।
পছন্দের কোর্স নির্বাচন
প্রথম কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Website ঘেটে, নিজের পছন্দ মত কোর্স বেছে নিতে হবে। ফিনল্যান্ডে Engineering সেকশনের কোর্সগুলোর চাহিদা বেশি। তাই, ফিনল্যান্ডে ভবিষ্যৎ খুঁজতে চাইলে অবশ্যই Engineering Stream -এ আবেদন করা শ্রেয়।
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মত এখানে দুই টি সেশন আছে। যথাঃ এটাম সেশন (Autumn Session) এবং স্প্রিং সেশন (Spring Session) । এটাম সেশন চলে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর আর স্প্রিং সেশন চলে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত।
ফিনল্যান্ডে মাস্টার্স প্রোগ্রাম ১.৫ থেকে ২ বছরের হয়ে থাকে আর এই প্রোগ্রামে আপনাকে সম্পন্ন করতে হবে ১২০ ক্রেডিট। আপনাকে অবশ্যই ৪ বছরের মধ্য মাস্টার্স কোর্স শেষ করতে হবে। আর ডক্টোরাল কোর্সে সময় দেওয়া হয়ে থাকে ৩ থেকে ৬ বছর। ডক্টোরাল সকল কোর্সের জন্য ইংরেজী ভাষাগত দক্ষতা বাধ্যতামূলক। মাস্টার্স বা ডক্টোরাল কোর্সে আবেদন করতে আপনার নূন্যতম IELTS Score 6.5 বা TOEFL- এ 550 Score থাকতে হবে।
ফিনল্যান্ডে ভর্তি আবেদন
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবার তারিখের হের ফের হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বরে আর সেটা শেষ করতে হয় ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে মার্চ পর্যন্ত সম্য দিয়ে থাকে। আবেদন করার জন্য আপনাকে শরণাপন্ন হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের। প্রতিটি ফিনিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে। আর আপনার প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। আপনি চাইলে আবেদন করতে পারবেন অন-লাইনে (On Line). আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ডাক যোগে ফর্ম পাঠিয়ে দেয়। সেই নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। আপনার আবেদনের উপর ভিত্তি করে আপনাকে দেওয়া হবে অফার লেটার (Offer Letter)। আবেদন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় বছর খানেক সময় লাগে। তাই, হাতে সময় নিয়ে আবেদন করা উচিত। ফিনল্যান্ডে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হতে পারে। তাই আগেই ওয়েব সাইট ঘেটে জেনে নিন আপনার নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সবকিছু।
আবেদন করতে মূলত প্রয়োজন পরবেঃ
১। সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ও মার্কসীটের ইংরেজি ভার্সন
২। সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র
৩। ভাষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
৪। রিকমেন্ডেশন লেটার
৫। মোটিভেশন লেটার
৬। পাসপোর্টের ফটোকপি
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অন্যান্য ডকুমেন্টস লাগতে পারে।
টিউশন ফি
ফিনল্যান্ডে কোর্স থেকে ভেদে পড়তে আপনাকে খরচ করতে হবে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ইউরো। এদেশে সাধারণত স্কলারশিপ প্রোগ্রাম বেশি নেই। এদেশে পড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ইরাসমাস মুন্ডাস।
ফিনল্যান্ডে আবাসন ও জীবনযাত্রা
ফিনল্যান্ডে থাকার জন্য স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট আছে। সাধারণত এসব এপার্টমেন্টেই শিক্ষার্থীরা থাকে। শেয়ারড এপার্টমেন্টও পাওয়া যায় এদেশে।
এদেশে জীবনযাত্রার একটি ব্যয়ের প্রাক্কলণ দেওয়া হলঃ
আবাসন বাবদ খরচঃ ২২০ – ২৪০ ইউরো
খাওয়া বাবদ খরচঃ ৮০ – ৯০ ইউরো
আনুষঙ্গিক ব্যয়ঃ ২০-৫০ ইউরো
স্বাস্থ্য বীমাঃ ২৫- ৭৫ ইউরো
ভিসা নিয়ে যত কথা
ফিনিশ ভিসার জন্য আপনাকে যেতে হবে ইন্ডিয়া, কারণ ফিনল্যান্ডের এম্বেসী বাংলাদেশে নেই। এই দেশের ভিসা পেতে আপনার নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস দরকার পড়বেঃ
১। পাসপোর্ট
২। ভিসা আবেদনের ফর্ম
৩। ভার্সিটির অফার লেটার
৪। পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি
৫। ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট
৬। ইনকাম এর উৎস
৭। টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণ
৮। ইন্স্যুরেন্স ও চাকুরির অভিজ্ঞতা (যদি থাকে)
আপনাকে ২ বছরের পারমিট এর জন্য আপনার নিজের একাউন্টসে ১৩,৪৪০ ইউরো দেখাতে হবে আর ১ বছরের পারমিট এর জন্য ৬৭২০ ইউরো দেখাতে হবে। আপনার থাকার ব্যয় যদি বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে তাহলে ২৮০ ইউরো প্রতি মাসে, আর যদি আপনাকে নিজেকেই থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করে তাহলে প্রতি মাসে ১৯৫ ইউরো করে যত বছরের পারমিটের জন্য আবেদন করবেন তত দিনের দেখাতে হবে।
আপনার স্পন্সর যদি পিতা-মাতা হয়, তাহলে অতিরিক্ত কাগজপত্র দেখাতে হতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, পিতা-মাতা ছাড়া অন্য কেউ স্পন্সর হবার সুযোগ নেই।
ফিনল্যান্ডে পার্টটাইম জব
ফিনল্যান্ডে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করার সু্যোগ পাবেন। আবার সামারে আর উন্টারে পাবেন ফুল টাইম টাইম কাজ করার সুযোগ। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই দেশে কাজ করার রয়েছে বিপুল সুযোগ। আবার ২০-৫০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর আপনি Teachers’ Assistant হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। তবে পার্ট টাইম চাকুরী করতে আপনাকে সুইডিশ ভাষা জানা থাকলে পাবেন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা।
ফিনল্যান্ডে কোর্স শেষে চাকুরির সুযোগ ও স্থায়ী বসবাস এর সম্ভাবনা
ফিনল্যান্ডে ছাত্র হিসাবে থাকাকালে আপনাকে B Status-এ গণ্য করা হবে। এরপর চাকুরী শুরু করলে আপনাকে দেওয়া হবে A Status। আপনি যদি ৪ বছর A Status নিয়ে ফিনল্যান্ডে থাকেন তাহলেই আপনি বৈধ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য আপনার ভাষাগত প্রমাণপত্র ও চাকুরীর প্রমাণপত্র দিয়েই স্থায়ী নাগরিক হিসেবে ফিনল্যান্ডে থাকতে পারবেন।
ফিনল্যান্ড ইউরোপের সমৃদ্ধ ও অপার সম্ভবনাময় এক দেশ। আপনি চাইলে নিজের সম্ভবনার খোঁজে আসতে পারেন ফিনল্যান্ডে।
তথ্যসুত্রঃ
লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ
সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সমুহঃ
- স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ - হাঙ্গেরিতে… হাঙ্গেরি ইউরোপের একটি অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এটি মধ্যে ইউরোপের…
- ব্রেক্সিট–পরবর্তী নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা ব্রেক্সিট–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার…
- রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ,নিজের আবেদন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যয়বহুল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের জন্য হয়ে ওঠে…
- আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ, নিজের আবেদন নিজেই করুণ নিজের আবেদনের আজকের পর্ব সাজানো হয়েছে বিশ্বের অন্যতম…