কেন জার্মানিতে পড়তে যাবেন?
জার্মানীকে বলা হয় “The Land of Ideas” বা “The Land of Engineers”- আর এর পেছনে যথেষ্ঠ কারণও রয়েছে। জার্মানী প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। তাই নিঃসন্দেহে জার্মানী উচ্চ শিক্ষার জন্য হতে পারে কাঙ্ক্ষিত স্থান। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে সুখবর দিতে চাই তা হল, এ দেশের প্রায় ৯০% বিশ্ববিদ্যালয়ে দিতে হয় না কোন টিউশন ফি। শুধু আপনাদের দিতে হবে সেমিস্টার ফি, যার পরিমাণ ১৫০-৪০০ ইউরো- ক্ষেত্র বিশেষে এটা ৫০০-৭০০ ইউরো।
এই প্রযুক্তির দেশে আপনাকে যে শুধু জার্মান ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এমনটা নয়। এখানে ইংরেজী ভাষায়ও পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বেছে নিতে হবে।
জার্মানীতে সাধারণত Summer Session (1st December – 15th January) এবং Winter Session (May – 15th July) – এই দুই সেশনে ভর্তি নিয়ে থাকে। যদি আপনি উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে জার্মানীতে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে যেতে চান তাহলে আপনাকে StudienKolleg করতে হবে এবং Entrance Exam-এ নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর পেলেই মিলবে এডমিশন। আর যদি এই পন্থায় যেতে না চান, তাহলে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫% Credit সম্পন্ন করে যেতে পারবেন স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের জন্য। আবার আপনি যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা Diploma কোর্সে জয়েন করেন তবে আপনাকে বাংলাদেশেই ১ বছর পড়াশুনা করতে হবে এবং ৫০% এর অধিক নম্বর অর্জন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিতে হবে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের Requirement বিবেচনা করতে হবে।
জার্মানীর Student Visa এর প্রকারভেদ
- Student Visa (Fix Term Language Course)
নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। ৩-৬ মাস মেয়াদী এই ভিসা, ভাষা শিক্ষালাভের জন্য দেওয়া হয়। এ সময় Part Time/ Full Time Job এর কোন সু্যোগ নেই।
- Student Application Visa
এই ভিসার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, আপনাকে প্রথমে German Language Course করে জার্মানি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং পরবর্তীতে জার্মান ভাষায় আপনাকে কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য আপনাকে জার্মান ভাষার B2 Course (European Framework Level 2) পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এই ভিসায় আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী মাধ্যমে পড়তে পারবেন না এবং আপনার Part Time/ Full Time Job করার সুযোগ নেই।
- Student Visa (Direct Admission to University)
এটাই সেই ভিসা যেখানে আপনার ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা এবং কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। তাই কষ্ট হলেও আপনার এই ভিসা অর্জনের চেষ্টা করা শ্রেয়।
জার্মানীতে পড়তে যাবার বিভিন্ন বিষয়াবলী
(১) যোগ্যতা
অনেকেই মনে করে জার্মানীতে পড়তে যাবার জন্য আপনার CGPA ৩.০০ এর উপরে লাগে। এটা সম্পূর্ণ ভুল- কারণ ৩.০০ এর চেয়েও কম CGPA নিয়েও অনেক অনেক শিক্ষার্থী পাড়ি জমাচ্ছে জার্মানীতে। তবে, CGPA ৩.০০ এর বেশী থাকলে অবশ্যই আপনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে যাবেন। তাই চেষ্টা করুন CGPA ৩.০০ এর বেশি রাখার। আর একেবারেই যদি তা সম্ভব না হয়, অন্যান্য কো-কারিকুলাম এক্টিভিটির মাধ্যমে নিজেকে তৈরী করে নেওয়া উচিত।
(২) কোর্স বাছাই
প্রথমে https://www.daad.de/deutschland/studienangebote/international-programs/en/ – Link এ গিয়ে Course Type (Bachelor’s, Master’s and Phd), Course Language (English or Germany) এবং Field of Study সঠিক মত বাছাই করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আপনি কোন ভাষায় পড়াশুনা করতে চান সেটা সঠিকভাবে নির্বাচন করেছেন কি না। এবার কোর্স বাছাই ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই শেষ হলে আপনাকে দ্বারস্থ হতে হবে Google, Wiki বা বৃহৎ ভাবে Internet সার্চের। আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking সহ যাবতীয় তথ্য খুঁজে নিতে ভুল করা যাবে না। কারণ এই বিশ্বাবিদ্যালয় আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সঠিক কোর্স না বেছে নিলে, আপনাকে ভুগতে হবে নানা ভাবে। তাই এমন কোর্স নির্বাচন করুন যা আপনার ভালো লাগে আর আপনি যে কোর্সের মাধ্যমে নিজেকে দাঁড় করাতে পারবেন।
(৩) ভাষাগত যোগ্যতা
Student Visa Regulation, Update- April, 2015 অনুযায়ী বর্তমানে জার্মানীতে Student Visa এর জন্য IELTS/ TOEFL- এর প্রয়োজন হয়। তবে High Ranking University-তে GRE-ও চাইতে পারে। তবে এই সব দেখে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, ব্যাচেলরের ৪ বছরের Medium of Instruction যদি হয় English, তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আপনি IELTS ছাড়াই Admission পাবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য Interview-এ ডাকে। এসব Interview-এ খুব জেনারেল বিষয় নিয়েই কথা হয়। তবে Visa Interview-এ আপনাকে অবশ্যই ইংরেজীতে পারদর্শিতা দেখাতে হবে। IELTS এ ৬.৫ স্কোর (কোন সেকশনেই ৬.০ এর নিচে নয়), থাকলে আপনি অনেক অংশে এগিয়ে যাবেন।
(৪) সেমিস্টার ও আবেদনের ডেডলাইন
প্রথমতঃ আপনি যে কোর্সটি করবেন বলে ঠিক করেছেন, সেটা কোন সেমিস্টারে (Winter/ Summer/ Both) অফার করা হয়েছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল ডেডলাইন ফলো করা। কোর্সটি কবে শুরু হল, কবে শেষ হবে এবং কবে এপ্লাই করতে হবে, কোর্সের বিবরণ, কোর্সের ক্রেডিট সবটার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হবে- নতুবা অনেক সময় বড় ভুল হয়ে যেতে পারে। ভিসা ইন্টারভিউ এর সময় এই বিষয়ে জানতে চাইতে পারে।
(৫) Semester Fee এবং Living Cost
মজার বিষয় হল, জার্মানীতে টিউশন ফি, এনরোলমেন্ট ফি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে না। আবার কোথাও কোথাও সেটা ৫০০-৭০০ ইউরো-ও হয়ে থাকে। আদতে, এই ফি গুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্স থেকে কোর্স- এগুলোর ভিন্নতা দেখা যায়। অফিসিয়ালি যদিও বলা হয় জার্মানিতে থাকা খাওয়া বাবদ ৮০০ ইউরো মত খরচ হবে, কিন্তু আপনি চাইলে অনায়াসে ৫০০ ইউরোর মধ্যে সব খরচ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন। আবার, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের কার্ড দেয়, যার মাধ্যমে তারা অনায়সে যাতায়াত করতে পারে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটির চুক্তি থাকে- এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের টিউশন ফি-এর সাথে এই অর্থ কেটে নেয়। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যাদের টিউশন ফি নাই, তারাও এই সুবিধা দিয়ে থাকে।
এখানে একটি খসড়া এস্টিমেট দেওয়া হল আপনাদের সুবিধার জন্যঃ
- Application Fee: Free of Cost/ 68 Euro [Depending on any assistance you take]
- Blocked Account: 10236 Euro
- Airfare: 600-750 Euro
- Hand Cash: 2000 Euro (Approximately)
So, total Cost: 13,000 Euro (Approx.)
Monthly Expense:
- Rent: 300 + Euro
- Health Insurance: 80+ Euro
- Food: 60+ Euro
- Telephone, Internet & Television License: 20- 35 Euro
- Leisure Activities: 10 -60 Euro
Approximately 535 + Euro
আর জার্মানীতে হোস্টেল বা বাসা খোজার চিন্তা করবেননা- কারণ আপনার সহায়তায় আছে DAAD Accommodation Finder, studenten ইত্যাদি। এজন্য ব্রাউজ করুনঃ
১। https://www2.daad.de/deutschland/nach-deutschland/bewerbung/en/22222-student-residence-hall/
২। https://www.studentenwerke.de/en
(৬) বিশ্ববিদ্যালয় ও শহর বাছাই পর্ব
আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking এর পাশাপাশি সেটা কোন শহরে অবস্থিত সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে, কারণ অনেক শহরের ক্ষেত্রে লেখা থাকে “Only a little Chance of Part-time Job”- এসব শহর এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
(৭) পার্ট টাইম জব, পি-আর ও নাগরিকত্ব
জার্মানীতে পার্ট টাইম জব করার সুযোগ রয়েছে- তবে সে সুযোগ একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবেই পাবেন। আর সেমিস্টার ব্রেকে পাবেন ফুল টাইম জব করার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে জার্মান ভাষায় দক্ষতা থাকলে খুবই ভালো হয়।
জার্মানীতে পড়াশুনার শেষে আপনি ১.৫ বছরের জব সার্চ ভিসা পাবেন। আপনি যদি একটানা ৫ বছরের বেশি জার্মানীতে থাকেন তাহলে পি-আর এর জন্য এবং ৮ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
(৮) ব্লকড একাউন্টস (Blocked Account)
জার্মানীতে একটি ব্লকড একাউন্টসে আপনার থাকা খাওয়া বাবদ ১০,২৩৬ ইউরো ফিক্সড করে রাখতে হবে। এজন্য কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক অব সিলন ব্যাঙ্কের সুখ্যাতি রয়েছে। তবে ব্লকড একাউন্টস করার সময় ব্যাঙ্কের ফি, সুবিধা অসুবিধা ইত্যাদি ভালো করে বিবেচনা করে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। ভয়ের কারণ নাই, ভিসা পেলে প্রতি মাসে ৮৫৩ ইউরো করে আপনি টাকা তুলে ফেলতে পারবেন। এবং এক বছর পর গোটা টাকাটাই তুলে ফেলতে পারবেন। যেসব শিক্ষার্থী সাধারণত ব্লকড একাউন্টসে টাকা রেখে জার্মানীতে যান, তাদের এই টাকায় সাধারণত হাত দিতে হয় না। পার্ট টাইম জব করেই খরচ মেটাতে পারবেন। এটা মূলত একটা ভিসা ফরমালিটি। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ব্লকড একাউন্টের টাকা যেহেতু জার্মানীতে যাবে সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতির বিষয় আছে- তাই হাতে সময় নিয়ে আবেদন করতে হবে।
(৯) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লিঙ্কঃ https://dhaka.diplo.de/contentblob/4989256/Daten/7335126/2017ChecklistStudent.pdf
এখানে আপনি পেয়ে যাবেন কি কি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপনার প্রয়োজন পড়বে। নিম্নে একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
- Valid Passport (with a Validity of at least 12 months)
- Three Nos. Recent Biometrical Passport Photographs (Not Older than 6 months)
- Two Completed Visa Forms (including 2 Pictures)
- Admission Letter (Original+2 Copies)
- Blocked Account Confirmation (Original+2 Copies)
- Health Insurance (Original+2 Copies)
- All Academic Certificates (Original+2 Copies)
- IELTS Certificate (Original+2 Copies)
- GRE Certificate, if required (Original+2 Copies)
- Photocopy of Passport (2 Copies)
- German language Course Certificate (Original+2 Copies) [ If Applicable]
- Police Clearance (If required)
- Birth Certificate (If required)
ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে Appointment নিতে হবে – আর একটা ফোন কলে আপনি সেটা পেয়েও যাবেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, E-mail বা Fax এর মধ্যমে কোন Appointment দেওয়া হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন পর্ব
আবেদন করার পূর্বে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হবে, University Website – এ গিয়ে Admission Section এর E-mail নিয়ে তাদের কাছ থেকে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যে, তাদের আসলে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে। জার্মানীর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে Hard Copy দিতে হয়, সে জন্য তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে True Cope নাকি Notarized Copy দিতে হবে। আপনি সব কাগজ চাইলে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন- সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কম লাগবে (আনুমানিক ২০০ টাকা মাত্র)। তবে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠাতে সময় লেগে যাবে প্রায় ৭-১৫ দিন। তাই হাতে সময় না থাকলে আপনাকে যেতে হবে DHL বা FedEx এর কাছে। DHL বা FedEx সাধারণত ৪-৫ দিনের মধ্যেই কাগজপত্র জার্মানীতে পাঠিয়ে দিবে।
তাহলে এখন বুঝতেই পারছেন জার্মানীতে আবেদন করা কঠিন মোটেও নয়। তাই, অন্যের কাছে না গিয়ে নিজেই করে ফেলুন নিজের আবেদন। শুভ কামনা রইলো আমাদের পক্ষ থেকে।
তথ্যসুত্রঃ
লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ
সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সমুহঃ
- স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ - হাঙ্গেরিতে… হাঙ্গেরি ইউরোপের একটি অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এটি মধ্যে ইউরোপের…
- ব্রেক্সিট–পরবর্তী নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা ব্রেক্সিট–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার…
- রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ,নিজের আবেদন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যয়বহুল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের জন্য হয়ে ওঠে…
- আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ, নিজের আবেদন নিজেই করুণ নিজের আবেদনের আজকের পর্ব সাজানো হয়েছে বিশ্বের অন্যতম…