ইতালিতে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুন নিজের আবেদন

ইতালি ইউরোপের মধ্যে নামকরা এক বিদ্যা পীঠস্থান- কারণ এদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাড়ি জমায় তাদের জ্ঞান পিপাসা পিটাতে। আর আপনিও যদি সেই দলের পথিক হতে চান, তাহলে জেনে নিন ইতালিতে পাড়ি জমানোর সকল খুঁটি নাটি। আর আজই করে ফেলুন নিজেই নিজের আবেদন।

Higher Study in Italy
Image Source: pexels.com

কোর্স নির্বাচন ও সেমিস্টার

ইতালিতে সরকারি ও বেসরকারি ওয়াল্ড র‍্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজী ও ইতালীয় উভয় ভাষায় কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। যদি আপনি ইতালীয় ভাষায় পারদর্শী না হয়ে থাকেন- তাহলে অবশ্যই ইংরেজী কোর্স চয়েস করুন। এদেশে মোত ৫৮ টি সরকারি ও ১৭ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে নিজের কোর্স বেছে অবশ্যই এডমিশন অফিসে মেইল করে খুঁটি নাটি বিষয় জেনে নিবেন।

আপনার সুবিধার্থে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিচে দেওয়া হলঃ

১। Sant’Anna School of Advanced Studies – Pisa (World Rank  149)

২। Scuola Normale Superiore di Pisa (World Rank  152)

৩। University of Bologna (World Rank  168)

 

এখানে বছরে সাধারণত দুইটি কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। প্রথম সেমিস্টার শুরু হয় সেপ্টেম্বর – অক্টোবর মাসে আর শেষ হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। অপরদিকে, দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসে আর শেষ হয় জুলাই মাসে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে তা পরিবর্তিত হতে পারে। এজন্য আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেটে ভালো করে জেনে শুনে তারপর প্রসেস শুরু করবেন।

ভাষাগত যোগ্যতা

বর্তমানে ইতালীতে ভিসার জন্য IELTS এ ৬.০০ ব্যান্ডস্কোর প্রয়োজন। অন্যদিকে ইতালীয় ভাষার জন্য কমপক্ষে B2 Level Euro pass Language Passport Classification প্রয়োজন। তবে বি-২ লেভেল পাস করলে ইতালিতে গিয়ে আপনাকে ভার্সিটিতে আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। আর যদি আপনি C2 Level Euro Pass Language Exam পাশ করেন তাহলে আপনাকে আর কোন পরীক্ষার ধার ধারতে হবে না।

টিউশন ফি

ইতালিতে টিউশন ফি তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী এ দেশকে উচ্চ শিক্ষার গন্তব্যস্থল হিসেবে মনে করে। এই দেশে প্রতি বছরে পড়াশুনা বাবদ ১৮০০ থেকে ৮০০০ ইউরো খরচ হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স ভেদে এই খরচ বাড়তে বা কমতে পারে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে কয়েক গুন বেশি খরচ গুণতে হবে শিক্ষার্থীদের।

University of Bologna
University of Bologna, Image Source: pexels.com

স্কলারশিপ

ইতালিতে বিভিন্ন ধরণের স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। সরকারিসহ বিভিন্ন স্কলারশিপে বিভিন্ন ধরণের অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্বমন্দার কথা মাথায় রেখে আমার সাজেশন থাকবে অবশ্যই স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করবেন। কারণ পার্ট টাইম জব করে ইতালিতে পড়াশুন করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে দিন-কে-দিন।

স্কলারশিপের তথ্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে স্কলারশিপ সেকশনে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পর্ব

ইতালিতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যেতে আপনাকে নূন্যতম HSC পাশ করতে হবে এবং আবেদনের সাথে আপনাকে আপনার কলেজ থেকে অবশ্যই টেস্টিমোনিয়াল নিতে হবে। আপনাকে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করতে হবে।

এই দেশে প্রথমেই আপনাকে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের সকল তথ্য দিয়ে ইমেইলের মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্য কিনা সেটা যাচাই করিয়ে নিতে হবে। তারপর এম্বেসীতে গিয়ে প্রি-এপ্লিকেশন রিকোয়েস্ট করতে হবে এবং ভর্ত্তির আবেদনপত্র সহ সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

এম্বেসী সেই আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে এবং পরবর্তীতে আপনাকে রেজাল্ট জানিয়ে দেওয়া হবে।

Italian Students
Image Source: Internet

বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলঃ

  1. Identity Documents and Passport size Photo
  2. All Academic Certificates and Marksheets
  3. CV
  4. Recommendation Letter and Motivational Letter
  5. IELTS/ TOEFL Test Score
  6. University Application Form

ইতালিতে যেতে সকল শিক্ষার্থীদের International Organization for Migration (IOM) এর মাধ্যমে সকল কাগজপত্র ভেরিফিকাশন করাতে হবে। তবে এই বিষয়ে চিন্তার কারণ নেই- ঢাকাতেই আছে IMO এর আফিস।

ব্যাঙ্ক সলভেন্সি

ইতালিতে আপনাকে পড়ার খরচ চালাতে পারবেন এমন পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ৮,০০০-১২,০০০ ইউরো আপনার ব্যাঙ্কে জমা দেখাতে হবে।

ভিসা আবেদন পর্ব

ইতালিতে সাধারণত তিন ধরণের স্টুডেন্ট ভিসা অফার করা হয়ে থাকে। যথাঃ

(১) স্টুডেন্ট ভিসা সাব ক্লাস ৫০০- এই ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদী এই ভিসার কোন স্পন্সর দরকার পড়ে না এবং  এই ভিসা পেলে আপনি ইতালিতে পার্ট টাইম জবও করতে পারবেন।

(২) স্টুডেন্ট গার্ডিয়ান ভিসা সাবক্লাস ৫৯০ – এই ভিসায় স্টুডেন্ট আবেদন করতে পারে কিন্তু এই ভিসা পেতে ৩০,০০০-৩৫,০০০ টাকা খরচ হবে এবং আপনার একাউন্টসে যথেষ্ঠ পরিমাণ অর্থ দেখাতে হবে আথে পরিবারের কাউকে আগে থেকেই ইতালির অধিবাসী হতে হবে। আপনআর বয়স ২১ বছরের বেশি হলেই আপনি এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ভিসায় আপনি চাইলেই পার্ট টাইম জব করতে পারবে।

(৩) স্পেশাল ক্যাটেগরী স্টুডেন্ট ভিসা সাবক্লাস ৪৪৪- এই ভিসায় আপনি চাকুরি করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুবিধা যেমনঃ এই ভিসার কোন মেয়াদ থাকে না, আপনার আবেদনের খরচ প্রয়োজন পরেনা সহ ইত্যাদি থাকে। তবে এই ভিসা পেতে গেলে আপনার পরিবারের কাউকে ইতালির অধিবাসী হতে হবে।

আপনি কোন ধরণের ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেটা নির্বাচন করে সেই ফর্ম এম্বেসীর ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। সাপোর্টেড ডকুমেন্টস দিয়ে এম্বেসীতে জমা দিতে হবে। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাপোর্টেড ডকুমেন্টস স্ক্যান করে জমা দিতে হয়।

ভিসা আবেদনের জন্য সাধারণ চেকলিস্ট হলঃ

  1. Passport with 4 copies passport size photographs
  2. Offer Letter
  3. All Certificates and Marksheets
  4. IELTS/ TOEFL Certificate
  5. Application Form
  6. Bank Solvency Paper
  7. Visa Application form

ভিসা আবেদন ও ভর্ত্তির আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৯০ – ১২০ দিন সময় লাগে।

Venice City, Italy
Venice City, Image Source: pexels.com

জীবন-যাত্রার ব্যয়

ইতালিতে আবাসন খাতে আপনাকে গুণতে হবে ৩০০ থেকে ১০০০ ইউরো এবং থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে খরচ হবে ১০০০ থেকে ১৫০০ ইউরো।

ইতালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই- প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন খোঁজার জন্য নিজস্ব আফিস থাকে। এই অফিস কম খরচে আপনার থাকার ব্যবস্থা করে দিবে।

পার্ট টাইম জব

ইতালীতে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা পার্ট টাইম জব করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু, বর্তমানে পার্ট টাইম জব পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ইতালীয় ভাষা ও পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা আপনাকে কাজ পেতে সাহায্য করবে।

কোর্স শেষে স্থায়িভাবে বসবাসের সুযোগ

ইতালিতে ফুল টাইম কাজের সনদ জমা দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসা থেকে পি,আর ক্যাটেগরীতে ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। তবে এই কাজটি একটু সময় সাপেক্ষ- এই ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ বছর সময় লাগে। পি,আর পাওয়ার পর আপনি যদি ইতালিতে নাগরিকত্ব পেতে চান তাহলে বৈধ ভাবে সেখানে ১০ বছর বসবাস করতে হবে।

Life in Italy
Image Source: pixabay.com

এই ছিল ইতালিতে পড়াশুনার যাবতীয়। আশা করি ইতালিতে পড়তে গিয়ে আপনিও নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন। আমাদের পক্ষ থেকে শুভ কামনা রইলো।

তথ্যসুত্রঃ

লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments