পূর্ব ইউরোপের অপরূপ সুন্দর ছোট একটি দেশ লাটভিয়া। এই দেশে রয়েছে হাজারো নদী ও হ্রদ। আর এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার মানুষ প্রতি বছর ভীড় জমায় এই দেশে। শুধু তাই নয়, এখানে উচ্চ শিক্ষার জন্যও অনেক শিক্ষার্থী ভীড় জমাচ্ছে সম্প্রতি কালে। তাই, আমরা আজ লাটভিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব।
কেন লাটভিয়াতে পড়তে যাবেন?
বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী এই দেশের আয়তন ৬৪,৫৮৯ বর্গকিলমিটার এবং জনসংখ্যা ১৯৫,৭০০। এদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শহর, বন্দর ও রাজধানী হল রিগা। এই দেশের অফিসিয়াল ভাষা লাটভিয়ান ও মুদ্রা ইউরো। এর প্রতিবেশি দেশগুলো হল লুথিনিয়া, এস্তোনিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, সুইডেন। এই দেশে কৃষি উপোযোগী জমির পরিমাণ ২৫% আর আয়তন বাংলাদেশের অর্ধেক। তবে উন্নয়নের দিক দিয়ে এটি অনেক এগিয়ে আছে। লাটভিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হল এই দেশের কম টিউশন ফি। প্রতি বছর বিদেশী শিক্ষার্থীর হার ১০% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যারা বিদেশে পড়তে যেতে চান, তাদের জন্য লাটভিয়া হয়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ ডেস্টিনেশন।
Image Source: pixabay.com
লাটভিয়ার শিক্ষার মান ভাল এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
লাটভিয়া পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা
যদি আপনি লাটভিয়াতে ব্যাচেলর পড়তে চান তাহলে আপনাকে কমপক্ষে HSC পাশ করতে হবে। এবং সাধারণত ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করে- আর তাই আপনাকে IELTS বা TOEFL লাগবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে যোগ্যতা ভিন্ন হয়ে থাকে। যদি আপনি মাস্টার্সে যেতে চান, তাহলে কমপক্ষে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। এই দেশে IELTS-এ কমপক্ষে ৬.০ অথবা TOEFL-এ ৫০০ থাকতে হবে বা ibt তে ৯০ স্কোর থাকতে হবে।
কোর্স সার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
উচ্চশিক্ষার প্রথম কাজ হল সাবজেক্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা। কারণ যদি আপনি ভালো কোর্স ও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনে ব্যর্থ হন, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই এই কাজটি অনেক ধৈর্য্য ও সতর্কতার সাথে করবেন। এই ক্ষেত্রে গুগল হতে পারে আপনার পরম বন্ধু। এই দেশে আপনি মেডিকেল, সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস সকল বিষয়েই পড়াশুনা করার সুযোগ পাবেন।
কোর্স নির্বাচন করতে আপনি সাহায্য নিতে পারেনে এই ওয়েবসাইট এরঃ
লাটভিয়ার কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্ট নিচে দেওয়া হলঃ
University of Latvia (LU), Riga
Riga Technical University
Riga Stradiņš University (formerly Medical Academy of Latvia)
Daugavpils University
University of Liepaja (former Liepaja Pedagogical Higher School)
Latvia University of Agriculture
Riga International School of Economics and Business Administration
Stockholm School of Economics in Riga
Baltic International Academy
Banking Institution of Higher Education
Latvian Academy of Sports Education
Latvian Maritime Academy
National Academy of Defense of the Republic of Latvia
Newport University CED
Police Academy of Latvia
Psychology Higher School
Rezekne Higher School
Riga Graduate School of Law (RGSL)
Riga Teacher Training and Educational Management Academy
School of Business Administration Turiba
Transport and Telecommunication Institute
Ventspils University College
Vidzeme University of Applied Sciences
ভর্তি আবেদনের প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনের প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে আবেদন ডাকযোগে পাঠাবেন নাকি অনলাইনে করবেন সেই বিষয়ে। মজার ব্যাপার হল, এই দেশে এরকম কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। এজন্য প্রথমেই আপনাকে ওয়েব সাইট দেখে ও ভার্সিটিতে মেইল করে আপনাকে জেনে নিতে হবে। আবেদনের জন্য আপনার আবেদন ফি ১০০ থেকে ২০০ ইউরো প্রয়োজন পরবে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই আবেদন ফি ফেরৎযোগ্য নহে। অন-লাইন বা অফ-লাইন আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর আপনাকে দেড় মাসের মত অপেক্ষা করতে হবে আপনার ফলাফল জানার জন্য। যদি কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন গ্রহণ করে তাহলে তারা আপনার সাক্ষাৎকার অথবা অনলাইন এক্সাম নিবে এবং তাতে পাশ করলে আপনি পেয়ে যাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত অফার লেটার । আর একই সাথে পাঠানো হবে একটি এগ্রিমেন্ট পেপার যাতে আপনাকে নিজ হাতে সাইন করতে হবে। এরপর আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে একাউন্টস নম্বর দেওয়া হবে, সেখানে টিউশন ফি জমা দিতে হবে।
এখন জেনে নিই আবেদনের সময় কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ
১। একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট
২। IELTS এর সনদ
৩। মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার
৪। CV
৫। পাসপোর্টের কপি ও ফটোগ্রাফ
৬। এপ্লিকেশন ফর্ম ও এপ্লিকেশন ফী জমা দেওয়ার রশিদ
ডকুমেন্টস সত্যায়নঃ
লাটভিয়ায় আবেদনের জন্য আপনাকে সকল কাগজপত্র ইংরেজীতে অনুবাদ ও নোটারাইজড করে নিতে হবে। এর পর আপনাকে সকল ডকুমেন্টস লিগ্যালাইজড করতে হবে। এটি কোথা থেকে এবং কিভাবে করবেন এটি বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দিবে।
Image Source: Internet
পড়াশোনার খরচ (টিউশন ফি)
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই দেশের টিউশন ফি অনেক কম। বিষয়ভেদে টিউশন ফি ও ভিন্ন হয়ে থাকে যেমনঃ
(১) মেডিকেল প্রোগ্রামঃ ৮,০০০- ১৫,০০০ ইউরো
(২)বিজনেস ম্যানেজমেন্টঃ ২,০০০ – ৬,০০০ ইউরো
(৩)ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামঃ ১,৫০০ – ৪,০০০ ইউরো
লাটভিয়া ইউরোপের একটি দেশ হলেও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এই দেশ কিছুটা নিচের দিকে।
পূর্বের বছরগুলোতে কিছু বাংলাদেশী শিক্ষার্থী লাটভিয়াতে ভর্তি হলেও তারা সেই দেশে পড়াশুনা শেষ না করে চলে আসার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষ রিকোয়ারমেন্ট, অর্থাৎ, ২ বছরের টিউশন ফি অগ্রীম প্রদানের শর্ত চালু করেছে।
তবে আপনি যদি প্রকৃতপক্ষেই পড়াশুন করতে চান, তাহলে এটি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। এখানে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে থেকে মেইল করে সব কিছু জেনে নিতে হবে।
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ
ব্যাংক স্বচ্ছলতার জন্য আপনাকে প্রতি বছরের জন্য ৫,৩০০ ইউরো করে, যত বছরের জন্য আপনি কোর্সে ভর্তি হবেন তত বছরের জন্য অর্থ দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে, ২ বছরের জন্য হলে আপনাকে ১০,৬০০ ইউরো ব্যাংকে দেখাতে হবে।
Image Source: Internet
লাটভিয়ায় আবাসন ব্যবস্থা
এই দেশে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে হোস্টেলের ব্যবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন স্টুডেন্ট এপার্টমেন্টেরও ব্যবস্থা এই দেশে রয়েছে। ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার আগেই বিষয়টি আপনাকে ফাইনালাইজ করতে হবে। ভর্তি আবেদনের সময় হোস্টেলের জন্যও আবেদন করবেন।
আপনি যদি অফার লেটার পেয়ে থাকেন, তাহলে আশা করা যায় আপনি ভিসাও পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশে লাটভিয়ার এম্বেসী না থাকায় আপনাকে পাশের রাষ্ট্র ইন্ডিয়াতে ভিসা জমা দিতে জেতে হবে। এই সময় সকল কাগজপত্র অরিজনাল ও ফটোকপি সাথে নিয়ে যেতে হবে। ভিসা আবেদনের জন্য পূর্বেই আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
থাকা ও খাওয়া বাবদ এই দেশে আপনাকে গুণতে হবে ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরো। তবে ব্যক্তিবিশেষে তা কম -বেশি হতে পারে। এই দেশে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের সু্যোগ পাবেন। কিন্তু পার্ট টাইম জবের সু্যোগ কম থাকায় অনেক স্টুডেন্ট সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই- ধীরে ধীরে এই সুযোগ আগের থেকে বাড়ছে। এক মাস কাজ করলে আপনি বেতন পাবেন আনুমানিক ৪০০ ইউরোর মত।
কোর্স শেষে চাকুরী ও স্থায়ী বসবাস এর সুযোগ
বর্তমান সময়ে একটা বিষয় লক্ষ করার মত – যে সকল বাংলাদেশী এই মুহর্তে লাটভিয়া আসছেন পড়াশুনা করতে তারা কেউ ই লাটভিয়াতে থাকছেন না । কারণ লাটভিয়াতে জব পাওয়া একটু কঠিন আর বেতন বেশি না বলে তারা কেউ ই ওই দেশে থাকতে চাচ্ছেন না। কিন্তু ওই সকল ছাত্র/ছাত্রীদের অভিবাসন নীতি সম্পর্কে কারো কোন সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার ফলে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। যারা মূলত পড়াশোনা করতে আসেন তাদের জন্য পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া অসম্বভ কিছু না। আর পড়াশুনারত অবস্থায় চাইলে আপনি আপনার রেসিডেন্ট পার্মিট ব্যবসায়িক পার্মিট এ পরিবর্তন করতে পারেন। ব্যবসায়িক পার্মিট এ পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে ব্যাঙ্ক এ কিছু টাকা দেখাতে হবে।
একটি তথ্য না বললেই নয়, লাটভিয়াতে সফল ভাবে কোর্স সম্পন্ন করার পর আপনি ইউরোপের যেকোন দেশে চাকুরী করতে পারবেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন।
কিছু কিছু ইউনিভার্সিটিতে আপনি বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স ও পি এইচ ডি তে পড়াশুনা করতে পারবেন।
সতর্কবানীউপরোক্ত আর্টিকেল এর সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রীহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া এবং এম্বেসী এর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল। হালনাগাদ তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং এম্বেসী এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উপরোক্ত আর্টিকেল এর কোন তথ্য/উপাত্ত আপনার কাছে ভুল মনে হলে সঠিক তথ্যের রেফারেন্স/ওয়েবলিংক সহ নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these cookies, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may have an effect on your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. This category only includes cookies that ensures basic functionalities and security features of the website. These cookies do not store any personal information.
Any cookies that may not be particularly necessary for the website to function and is used specifically to collect user personal data via analytics, ads, other embedded contents are termed as non-necessary cookies. It is mandatory to procure user consent prior to running these cookies on your website.