নিশীথ সূর্যের দেশ নামে পরিচিত স্কান্ডিনেভিয়ান একটি দেশ নরওয়ে। ইউরোপের ৪ টি নর্ডিক দেশের মধ্য অন্যতম নরওয়ে বিশ্বের শান্তির সূচকে আছে এক নম্বরে। এদেশের জীবন যাত্রার খরচ একটু বেশি হলেও অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত নরওয়েতে রয়েছে ভবিষ্যত গড়ার অপার সম্ভবনা। কারণ, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি-শিক্ষার দিক দিয়ে বিশ্বে এ দেশের জুড়ি মেলা ভার। এই দেশের রাজধানী অসলো, ভাষা নরওয়েজিয়ান আর মুদ্রা নরওয়েজিয়ান ক্রোনা। আপনিও যদি উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান এই দেশে তাহলে এই পুরো লেখাটি আপনার জন্য।
Image Source: Internet
নরওয়েতে পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা
নরওয়েতে পড়ার জন্য অবশ্যই আপনার কিছু নূন্যতম যোগ্যতা থাকতে হবে। একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে আপনাকে ৬০% নম্বর পেতে হবে। আপনি যদি যেতে চান ব্যাচেলর ডিগ্রীর জন্য তাহলে আপনাকে HSC + ১ বছর বাংলাদেশি যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে হবে। অন্যদিকে মাস্টার্স করতে আগ্রহী প্রার্থীদের অব্যশই ৩ বছরের ব্যাচেলর কোর্স কমপ্লিট থাকতে হবে। পক্ষান্তরে ২ বছরের মাস্টার্স কোর্স ম্যান্ডাটরি যদি আপনি PhD কোর্সে পড়তে যেতে চান।
নরওয়েতে আপনি পেয়ে যাবেন বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে মোট ৯ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধীনে রয়েছে ১৫০টির মত কলেজ এবং ২ টি পাবলিক আর্টস ইন্সটিটিউট। নিচে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্ক দেওয়া হলঃ
এদেশে চাইলেও আপনি নরওয়েজিয়ান বা ইংরেজ- যে কোন ভাষায় পড়াশুনা করতে পারেন। কিন্তু নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়তে গেলে এ ভাষায় ভালো দখল থাকতে হবে।
IELTS স্কোর
সাধারণত এ দেশে পড়তে আপনাকে IELTS এ তুলতে হবে কমপক্ষে ৬.০ স্কোর। আর মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে তুলতে হবে ৬.৫ – তবেই আপনি Safe Zone এ থাকবেন।
আবেদনের সময়সীমা
সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে আবেদন পর্ব। যদিও এটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্নতা আনে, তাই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে সঠিক ভাবে তথ্য উপাত্ত ঘেটে দেখতে হবে।
কোর্স বাছাই
নরওয়েতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ইংরেজী কোর্স অফার করা হয়। তাই, আপনি আগে থেকে দেশের জব মার্কেট, আর যদি নরওয়েতেই থাকতে চান তাহলে সে দেশের জব মার্কেট বুঝে সাবজেক্ট বাছাই করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ক্রেডিট ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী আছে। যেমনঃ অবশ্যই আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তা গ্রেড- বি (Grade B) এর আওতায় থাকতে হবে। আপনি যদি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০% এর অধিক কোর্স সম্পন্ন করে থাকেন, তাহলে ক্রেডিট ট্রান্সফার আর সম্ভব নয়। আর অবশ্যই আপনাকে শেষ করা সকল কোর্সের কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে হবে।
সেমিস্টার ফি / টিউশন ফি
নরওয়েতে সাধারণত কোন টিউশন ফি লাগে না। তবে আপনাকে সেমিস্টার ফি দিতে হবে এবং তা হল প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০ নরওয়েজিয়ান ক্রোনা। তবে, কিছু প্রোগ্রাম বা কোর্সের ক্ষেত্রে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রতি সেমিস্টারে ৫১-১০১ মার্কিন ডলার ফি খরচ হয়।
স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ
বর্তমানে নরওয়েতে বাংলাদেশিদের জন্য কোন কোটা ভিত্তিক স্কলারশিপ নেই। তবে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই- এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক ধরণের স্কলারশিপ। আপনার সুবিদার্থে লিঙ্কটি দেওয়া হলঃ
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা স্কলারশিপ রয়েছে। যদি আপনি স্কলারশিপ পেয়ে যান, তাহলে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সব ধরণের খরচের জন্য থাকবে অর্থ বরাদ্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্ত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে কাগজপত্রের ধরণও ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই আপনাকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট খুঁজে তথ্য উপাত্ত ঘেটে আবেদন করতে হবে।
আপনার বোঝা ও জানার সুবিধার্থে নিচে কি কি ডকুমান্টেস জমা দিতে হবে তার একটি লিস্ট দেওয়া হলঃ
১। প্রথমে নির্দিষত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে- সেটা অনলাইন বা অফলাইন দুটোই হতে পারে। এটা পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল।
২। সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট,
৩। IELTS সনদ
৪। পাসপোর্টের কপি (পাসপোর্টে কমপক্ষে ১ বছর মেয়াদ থাকতে হবে)
৫। মোটিভেশন লেটার (Motivation Letter)
৬। রিকমেন্ডেশন লেটার (Recommendation Letter)
৭। চাকুরীর অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে)
Image Source: Internet
ব্যাংক সলভেন্সির সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লেখ্য যে, অফার লেটার পাওয়ার পর আপনাকে ১,০৩,৯৫০ নরওয়েজিয়ান ক্রোনা নরওয়ের ব্যাংকে পাঠাতে হবে। অবশ্য, ব্যাংক ও কোন একাউন্টসে পাঠাতে হবে সেটা আপনাকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিবে। চিন্তার কারণ নেই- নরওয়ে যাবার পর পরই আপনি চাইলে পুরো টাকা একবারে তুলে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। আর যদি আপনি ভিসা না পান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে পুরো টাকাটাই ফেরত পাঠিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে হয়ত ডলারের দাম বাড়া বা কমার কারণে হয়ত কিছু ক্ষতি হতে পারে।কাগজপত্র হার্ড কপি নাকি সফট কপি পাঠাতে হবে সেটাও নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। তাই, আগে ভাগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেইল করে জেনে নিন সঠিক তথ্য। সকল ডকুমেন্টস সত্যায়িত হতে হবে। আর কোনটি যদি ইংরেজীতে না হয়, তাহলে ইংরেজীতে অনুবাদ করার পর নোটারী করে পাঠাতে হবে।
ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যদি আপনি এডমিশন পেয়ে যান, তাহলে টাকা জমা করা ও কাগজপত্র নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর পর কাজ হবে এম্বেসীতে ভিসার জন্য আবেদন করা। এজন্য যা যা প্রয়োজনঃ
১। স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিট এপ্লিকেশন
২। পাসপোর্টের কপি
৩। ভিসা ফি
৪। অফার লেটার
৫। মোটিভিশন লেটার
৬। IELTS সনদ
৭। Housing ডকুমেন্ট
৮। ব্যাংক স্টেটমেন্ট
Image Source: Internet
উল্লেখ্য, নরওয়েতে ভিসা এপ্লিকেশনের জন্য যে ইন্সুরেন্স লাগে, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয়। সঠিক তথ্যের জন্য চেকলিস্ট এম্বেসী ওয়েবসাইটে দেখে নিতে হবে- সে জন্য নিচে একটি লিঙ্ক দেওয়ায় হলঃ
এক্ষেত্রে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, কারণ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধা নিতে আপনাকে আবেদন করতে হবে কর্তৃপক্ষ বরাবর।
পার্ট টাইম জব এবং লিভিং এক্সপেন্স
নরওয়েতে থাকা খাওয়ার খরচ তুলনামূলক ভাবে বেশি। এখানে প্রায় ৪০০-৮০০ ইউরো গুনতে হবে এই খাতে। এখানে, ক্যাফে, বার, সামার জব, সিজোনাল জব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর, হেলথ সেক্টর, ফিশিং সেক্টর, সোপ, ক্লিনার, ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটিং, এনজিও, সেলস, কল সেন্টার, ট্রাভেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে কাজ করে ঘণ্টায় ৭-২২ মার্কিন ডলার আয় করা যায়।
হ্যা- আপনি নরওয়েতে গিয়ে পার্ট টাইম জবের সুযোগ পাবেন- তবে সেটা সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশি নয়। তবে সামার ভ্যাকেশনে আপনি চাইলে ফুল টাইম জব করতে পারবেন। নরওয়েজিয়ান ভাষা জানা না থাকলে জব পেতে খুব কষ্ট হবে। তাই দেশ ছাড়ার আগে নরওয়েজিয়ান ভাষা শিখে যাওয়াই উত্তম।
Image Source: Internet
পারমানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট
একটানা ৩ বছরের বেশি সময় বৈধভাবে এ দেশে থাকলে আপনি পি,আর – এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মাস্টার্স শেষে ১ বছর আপনার সাবজেক্ট রিলেটেড জব করার পর আপনি পি,আর- এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া, মাস্টার্সের পর আপনি পিএইচডি-তে এপ্লাই করেন তাহলেও আপনি পি,আর-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এদেশে পিএইচডি-কে জব হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
যদি প্রথম থেকে আপনার ইচ্ছা থাকে নরওয়েতে খুটি গাড়ার, তাহলে উচিত হবে প্রথম সপ্তাহ থেকেই নরওয়েজিয়ান ভাষা রপ্ত করা। এ দেশে আপনি চাইলে পরিবার নিয়েও আসতে পারেন- সে জন্য আপনাকে লিভিং কস্টের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক সলভেন্সি দেখাতে হবে।
সতর্কবানীউপরোক্ত আর্টিকেল এর সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রীহিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া এবং এম্বেসী এর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল। হালনাগাদ তথ্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং এম্বেসী এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উপরোক্ত আর্টিকেল এর কোন তথ্য/উপাত্ত আপনার কাছে ভুল মনে হলে সঠিক তথ্যের রেফারেন্স/ওয়েবলিংক সহ নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these cookies, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may have an effect on your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. This category only includes cookies that ensures basic functionalities and security features of the website. These cookies do not store any personal information.
Any cookies that may not be particularly necessary for the website to function and is used specifically to collect user personal data via analytics, ads, other embedded contents are termed as non-necessary cookies. It is mandatory to procure user consent prior to running these cookies on your website.