উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়তে চাইলে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বিবেচিত বিষয় গুলোর মাঝে অন্যতম হল স্পন্সরশীপ । কোন একটি নির্দিষ্ট দেশে পড়াশোনা, থাকা – খাওয়া অর্থাৎ সেখানে জীবন – ধারণের জন্য আপনার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে কিনা সেটার প্রমাণস্বরূপ এটা লাগে। মুলত কিছু ডকুমেন্ট যা প্রমান করবে আপনি উক্ত দেশের মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড এর জীবন-যাপন এর খরচ বহন করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এটাকে সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি (সচ্ছলতার সনদ)ও বলা হয়। টাকার পরিমাণটা একেক দেশে একেক রকম হতে পারে।
স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি কি?
কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির জন্য আপনার স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি দরকার হবে না। এটা দরকার হবে এম্বাসিতে ভিসা এপ্লিকেশন জমা দেওয়ার জন্য। আপনি যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন তাহলেও আপনার এই স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি দরকার হবে না, যেহেতু স্পন্সরশীপ প্রদানকৃত সংস্থা ই আপনার সকল খরচ বহন করবে।
স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি কি তা আমরা এরমাঝে বুজে গেছি। আবারো বলি – যে দেশে আপনি পড়তে যেতে চাচ্ছেন সেখানে থাকাকালীন আপনার সকল খরচ (পড়াশোনা, থাকা – খাওয়া ও অন্যান্য খরচ) বহন করার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তা প্রমান করার জন্য যেসকল ডকুমেন্ট অথবা সাপোর্টিং ডকুমেন্ট আপনাকে এম্বাসিতে ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে জমা দিতে হয় ঐ সকল ডকুমেন্ট ই স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি নামে পরিচিত।
এই ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট স্টেটমেন্ট একটি বহুল প্রচলিত ডকুমেন্ট যা স্পন্সরশীপ / সার্টিফিকেট অফ সলভেন্সি হিসেবে এম্বাসিতে ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে জমা দেওয়া হয়।অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট দেশের রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ি ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রেখে উক্ত ব্যাংক একাউন্ট এর স্টেটমেন্ট ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে জমা দেওয়া।
যেহেতু ছাত্র হিসেবে আপনার নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নাই, তাই আপনাকে ব্যাংক এ প্রদর্শিত টাকার উৎস হিসেবে কোন একজন স্পন্সর এর সহায়তা নিতে হবে।
স্পন্সর (জামিন দাতা) কি এবং কে আপনার স্পন্সর হতে পারবেন?
যেহেতু ছাত্র হিসেবে আপনার নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নাই, তাই বিদেশে থাকাকালীন আপনার সকল খরচ এর দায় ভার যিনি নিবেন তাকে বলে স্পন্সর বা গ্যারান্টর বা জামিন দাতা।স্পন্সর আপনাকে স্পন্সরশীপ দিবে। অর্থাৎ আপনার ব্যাংক এ প্রদর্শিত টাকার উৎস হবে আপনার স্পন্সর।
আপনি যখন বাইরে পড়তে যাবেন, তখন আপনার জন্য যে টাকা ব্যয় হবে তার একটা অনুমানিক হিসাব থাকে, এবং সেই হিসাব অনুযায়ী টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতে হবে। আপনার স্পন্সর এই টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখবেন এবং লিখিতভাবে এই দায়িত্ব-ভার গ্রহণ করবেন।
সাধারণত স্পন্সর যে কেউ হতে পারবেন। তবে স্পন্সর আসলে কে হবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন। অনেক দেশে আপনার মাতা-পিতা ছাড়া অন্যকেউ আপনার স্পন্সর হতে পারবেন না। আবার অনেক দেশে শুধু মাত্র ব্লাড কানেকশন সাপেক্ষে স্পন্সর হতে পারবেন। আবার অনেক দেশ সেই দেশে অবস্থিত কোন আত্মীয়কে স্পন্সর হবার সুযোগ দেয়। মোদ্দা কথা, আপনি কোন দেশে আবেদন করছেন, সেই দেশের নিয়ম অনুযায়ী আপনার স্পন্সর কে হবেন, সেটা নির্ভর করছে।
স্পন্সর হবার জন্য আপনাকে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে আপনার NID, Passport নাম্বার উল্লেখপূর্বক একটি অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষর করতে হবে যে আপনি স্বেচ্ছায় আবেদনকারীর বিদেশে অধ্যয়নের জন্য টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচের ভার বহন করবেন। এই অঙ্গিকারনামা আপনাকে এফিডেভিড করে আপনাকে ভিসা ও আবেদনের সাথে জমা দিতে হতে পারে। তাই তথ্য সঠিক ও যথার্থ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
স্পন্সর এর সামর্থ্য বা যোগ্যতা ও প্রয়োজনিও ডকুমেন্টস
এই পর্যন্ত আলোচনায় এটা বোঝাই যাচ্ছে, যিনি আপনার স্পন্সর হবেন তাকে আর্থিক ভাবে বেশ সামর্থবান হতে হবে। তার আপনার জন্য বড় অংকের টাকা খরচের সামর্থ থাকতে হবে। স্পন্সর দাতার আয় এমন থাকা ভাল যেন তিনি তার পারিবারিক এবং মাসিক খরচপাতি চালানোর পরেও মাসে ১০০০ – ১১০০ ইউরো/ডলার সঞ্চয় দেখাতে পারেন।
স্পন্সর যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে দেখাতে হবে যে, প্রতি (১) বছরের ব্যবসায়িক লেনদেনের পরেও তার স্পন্সরশীপ হবার যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। উনার ব্যাবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স রিটার্ন পেপার অর্থাৎ ব্যাবসায়িক খাতে দেওয়া ট্যাক্স পরিশোধের রসিদ ও ব্যাবসায়িক খাতে লেনদেন করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট (ব্যাবসায়িক ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট) দিতে হবে। আর যদি উনার নিজের ব্যাংক একাউন্টে বড় এমাউন্টের টাকা থাকে তাহলে সেটাও সাথে দিতে পারেন এবং ঐ একাউন্টের শেষ ৬ মাসের ব্যাংক বিবৃতি (ব্যাংক স্টেটমেন্ট) দিতে পারেন
আবার আপনার স্পন্সর যদি চাকুরিজীবী হন, তাহলে তার চাকুরীর কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে সাথে দিতে হবে ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
আর বিদেশে অবস্থিত কোন আত্মীয় যদি স্পন্সর হন, আর আপনি যদি স্পন্সরের বাসায় অবস্থান করতে চান, তাহলে তার বাসায় তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা উল্লেখপূর্বক আপনাকে একোমোডেট করার পর্যাপ্ত স্পেস আছে সেটা উল্লেখ করতে হবে।
স্পন্সর বাইরে যাবার জন্য আপনার খুঁটি- তাই আপনার খুঁটি শক্ত হলে ভিসা পেতে আপনার সুবিধা হবে। আর ডকুমেন্টস দেবার সময় অবশ্যই সঠিক ডকুমেন্টস দিবেন। ভিসা দেবার সময় এম্বেসী অনেক সময় বিভিন্ন এজেন্সী দিয়ে আপনার ডকুমেন্টস ক্রস চেক করায়। তাই, জাল বা Fabricated Documents দিলে আপনার যেমন ক্ষতি, তেমনি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সুতরাং, সঠিক ভাবে আবেদন করুন, আশা করি আপনার ডকুমেন্টস অবশ্যই কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে আর আপনার স্বপ্ন পূরণে আপনি আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন।
লেখক/লেখিকা পরিচিতিঃ
সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সমুহঃ
- স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ - হাঙ্গেরিতে… হাঙ্গেরি ইউরোপের একটি অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এটি মধ্যে ইউরোপের…
- ব্রেক্সিট–পরবর্তী নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা ব্রেক্সিট–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার…
- রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ,নিজের আবেদন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যয়বহুল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের জন্য হয়ে ওঠে…
- আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ, নিজের আবেদন নিজেই করুণ নিজের আবেদনের আজকের পর্ব সাজানো হয়েছে বিশ্বের অন্যতম…